গাইবান্ধা প্রতিনিধি :
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বাস উল্টে নিহত পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে একজন বাসের হেলপার ও চারজন যাত্রী ছিলেন।
গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আখতারুজ্জামান শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিহতদের পরিচয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন, লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার দোয়ানী গ্রামের সোহরাব আলীর ছেলে বিদ্যুৎ মিয়া (৩২)। বিদ্যুৎ দুর্ঘটনা কবলিত বরকত পরিবহণের হেলপার ছিলেন। লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বোতারছাড়া গ্রামের মহসিন আলীর ছেলে মাহাবুল আলম (২২), রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তাজপুর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন (২০), টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার বিশ্বাস বতকা গ্রামের ভুপন সরকারের ছেলে সুনিল সরকার (৪৫) ও ঢাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার বল্লাবাজারের ভোলা নাথ সাহার ছেলে বিকাশ টন্দ্র সাহা (৪৫)। বিকাশ চন্দ্র পেশায় একজন এ্যালুমিনিয়াম ব্যবসায়ী ছিলেন।
ওসি আখতারুজ্জামান জানান, নিহতদের একজন বাসের হেলপার ও চারজন যাত্রী ছিলেন। নিহতদের স্বজনকে খবর দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে বিদ্যুৎ ও বিকাশের স্বজনরা হাইওয়ে থানায় এসে লাশ নিয়ে গেছেন। অন্য তিনজনের পরিবারের স্বজনরাও দুপুরের মধ্যে হাইওয়েতে পৌঁছালে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
দুর্ঘটনার জন্য চালকের ঘুম ও বেপরোয়া গতিকেই দায়ি করে ওসি বলেন, দুর্ঘটনার সময় মহাসড়ক ফাঁকা ছিলো। কিন্তু তারপরেও চালক হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণ হারালে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মামলা না করায় পুলিশ বাদি হয়ে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বাসটি উদ্ধার করে হাইওয়ে থানায় আনা হয়েছে।
এরআগে, শনিবার গভীর রাতে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জের কোমরপুর (কালিতলার জুম্মার ঘর) এলাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বুড়িমারিগামী বরকত পরিবহণের বাসটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে বাসটি উল্টে সড়কের পাশে পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রথমে তিনজন ও পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় শিশু ও নারীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন।
খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এছাড়া নিহতের লাশ ও দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে হাইওয়ে পুলিশ।
এদিকে, আহতদের মধ্যে নয়জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মো. রবিউল ইসলাম।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আহতদের অভিযোগ, ঢাকা থেকে বাসটি ছাড়ার পর থেকেই চালক বেপরোয়া গতিতে বাস চালায়। সড়কে প্রত্যেক যানবাহনকে ওভারটেকিং করে বগুড়ায় পৌঁছে চালক। পরে বগুড়াতে খাবার বিরতি শেষে চালক আরও বেপরোয়া গতিতে বাস চালাচ্ছিলেন। নিষেধ করার পরেও বাসটি স্বাভাবিক গতিতে চালায়নি চালক। পরে হঠাৎ করেই নিয়ন্ত্রণ হারালে বাসটি উল্টে গিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। ঘুমঘুম ভাব নিয়েই চালক বাসটি চালায় বলেও অভিযোগ যাত্রীদের।
এদিকে, দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক পরিবারকে নগদ ১০ হাজার টাকা করে এবং আহতদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার কথা জানিয়েছেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামকৃষ্ণ বর্মণ।
টিবিজেড/
Leave a reply