স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সর্বস্তরে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ে মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে। ফলে আগের তুলনায় হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপস্থিতি দ্বিগুণ হয়েছে। এ ছাড়া সব হাসপাতালে সেবামূল্য তালিকা প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইন না মানলে হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ-২০১৯ উদ্যাপন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে সোমবার তিনি এসব কথা বলেন। এতে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, চিকিৎসা শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব জিএম সালেহ উদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে এবং দেশের প্রতিটি ব্যক্তির স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও এ সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধিতে দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ পালিত হতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। ‘স্বাস্থ্যসেবা অধিকার, শেখ হাসিনার অঙ্গীকার’ প্রতিপাদ্যে এ কর্মসূচি পালিত হবে।
এ ছাড়া প্রতিবছর ২৩-১৯ এপ্রিল জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ পালিত হলেও এ বছর স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহের সঙ্গে পুষ্টি সপ্তাহ পালিত হবে। স্বাস্থ্য খাতের বিপুল উন্নয়ন হওয়া সত্ত্বেও জাতীয়ভাবে কর্মসূচি না থাকায় জনগণ এ বিষয়ে তথ্য পাচ্ছে না। এ বিষয় বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ উদ্যাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে জাতীয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে নানামুখী কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, র্যালি, ক্রোড়পত্র, ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, টেলিভিশনে প্রচার, সেমিনার, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, চিকিৎসাসেবায় নৈতিকতা বিষয়ক আলোচনা, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পুষ্টিবিষয়ক আলোচনা অন্যতম। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও এ ধরনের কর্মসূচি পালিত হবে। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা গতিশীল করতে একশ’ গাড়িও প্রদান করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত এক দশকে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন নতুন বিশেষায়িত ও জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।
‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট’, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিওরোসায়েন্স, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইএনটি, ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট মুগদা জেনারেল হাসপাতালসহ অনেক হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। আরও অনেক হাসপাতাল সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে।
এ ছাড়া উপজেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন, চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ পদ সৃষ্টি, নতুন নতুন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ, টিকাদান কর্মসূচিতে নতুন নতুন টিকা সংযোজন করা হয়েছে। সরকারের গত মেয়াদে ১৩ হাজার চিকিৎসক, ১৫ হাজার নার্স এবং ১৬ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরও নতুন ১০ হাজার চিকিৎসকসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান। গত সপ্তাহে বিসিএসের মাধ্যমে ৩০৬ জন চিকিৎসক যোগদান করেছেন।
তিনি বলেন, সরকার বর্তমানে জিডিপির শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২, যা ২০০০ সালে ছিল ৬৫ দশমিক ৩। শিশুদের টিকাদানের অর্জন ৯৭ শতাংশ; অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে ৬৫ শতাংশ মানুষকে। মাতৃমৃত্যুর হার ২০১৭ সালে প্রতি লাখে ১৭২ জন যা ২০১৫ সালে ছিল ১৭৬ জন;
প্রতি ১০০০ জনে নবজাতকের মৃত্যু ২০১৫ সালে ছিল ২০ যা ২০১৭ সালে কমে হয় ১৮ দশমিক ৪। সরকার প্রতি বিভাগে একটি করে ক্যান্সার ও কিডনি হাসপাতাল নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি প্রতি জেলা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া সরকারিভাবে ক্যান্সার ও যক্ষ্মার প্রতিষেধক উৎপাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
Leave a reply