অবশেষে রাজধানীর হাতিরঝিল লেকে অবৈধভাবে নির্মিত বহুতল ভবন ভাঙার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
সোমবার একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘ আইনি জটিলতার অবসান শেষে আমরা উচ্চ আদালত কর্তৃক নতুন করে কোন প্রকার সময় বৃদ্ধি বা ভবন ভাঙ্গা কার্যক্রম স্থগিত রাখতে কোন নির্দেশনা না পাওয়ায় বিজিএমইএ ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার কাজ শুরু করছি।
এ বিষয়ে রাজউক সূত্র জানায়, ভবনটি ভাঙ্গতে বিজিএমইএকে দেয়া সময় পার হয়ে যাওয়ার পরই সরকার এই ভবনটি ভাঙ্গার কার্যক্রম শুরু করছে। ভবনটি ভাঙ্গার জন্য রাজউকের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান।
রাজউক সূত্র জানায়, ভবন ভাঙ্গার কার্যক্রম বাস্তবায়নের সময় পুলিশ সেনাবাহিনী, আনসার, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যগণ উপস্থিত থাকবেন।
মঙ্গলবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিজিএমইএ ভবনের সব ইউটিলিটি সার্ভিস যেমন গ্যাস বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন লাইনসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ভবনটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। এছাড়া ভবনটি থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে অফিস মালিকদের স্বল্প সময় প্রদান করা হতে পারে। এরপরই মূল ভবন ভাঙ্গার কার্যক্রম শুরু করা হবে।
‘বিজিএমইএ ভবন’ অপসারণে আপিল বিভাগের দেয়া এক বছর সময় শেষ হয়েছে ১২ এপ্রিল। গত বছরের ২ এপ্রিল সর্বোচ্চ আদালত ভবনটি অপসারণে তৈরি পোশাক ও রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএকে এক বছর দশ দিন সময় দেন।
রাজউকের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে আদালত যদি আর সময় না দেন তাহলে আমরা ভবনটি ভেঙে ফেলব। এ বিষয়ে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।
এ বিষয়ে করা রিটের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, হাতিরঝিলে খালের ওপর নির্মিত বহুতল ভবন অপসারণে বিজিএমইএকে আপিল বিভাগের দেয়া এক বছর সময় শেষ হয়েছে গত শুক্রবার। ইতোমধ্যে বিজিএমইএ ভবন থেকে তাদের মালামাল সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করছে বলে শুনেছি।
বিজিএমইএর পক্ষে ভবন ভাঙার বিষয়ে আরও সময় চাওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জানা মতে তারা আর সময় চায়নি।
জলাধার আইন ভেঙে নির্মিত বিজিএমইএ ভবনকে সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে ‘একটি ক্যান্সার’ বলেছিল হাইকোর্ট। ওই ভবন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় আপিলেও বহাল থাকে। পরে বিজিএমইএ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। ভবনটি টিকিয়ে রাখতে বিজিএমইএ নেতারা বহু চেষ্টা করেছেন। দীর্ঘ আট বছর মামলা লড়ে পরাজিত হন তারা।
ভবনটি সরাতে একাধিকবার সময় নেয় বিজিএমইএ। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৫০ শতাংশ কমমূল্যে উত্তরার ১৭ নং সেক্টরে ১১০ কাঠা জমির ওপর ১৩ তলা ভবন নির্মিত হচ্ছে। ২০১৭ সালে নতুন এই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৬ তলার নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া ভবনটির পুরো কাজ শেষ হতে পারে ২০২০ সালের জুনে। তবে কয়েকটি তলার নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় ও আদালতের বাধ্যবাধকতা থাকায় চলতি মাসেই বিজিএমইএ’র প্রধান কার্যালয় উত্তরায় স্থানান্তর করা হচ্ছে।
Leave a reply