নিন্দার ঝড়ে বেসামাল শমী কায়সার

|

মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে সাংবাদিকদের আটকে রেখে দেহ তল্লাশি আর ‘চোর’ বলে সম্বোধনের ঘটনায় অভিনেত্রী শমী কায়সারের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে। অনেক নেটিজেনই শমী কায়সারের এরকম ব্যবহারে কঠোর সমালোচনা করেন। তারা প্রকাশ্য ক্ষমা চাওয়ার কথাও বলেন। অনেকে তাকে বয়কট করারও আহ্বান জানায়।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক ও কলামিষ্ট পীর হাবীব লিখেছেন, ‘শমী কায়সারকে সাংবাদিক সমাজের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতেই হবে, নয় তাকে বয়কট করতে হবে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর সিনিয়র রিপোর্টার ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী তার ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন ‘ছি, ছি! শমী কায়সার, আপনার ধৃষ্টতা দেখে লজ্জিত!’

আসিফ এনতাজ রবি রম্য করে লিখেন, সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- এমন এক সাংবাদিককে বললাম, শমী কায়সার নাকি তোমাদের অপমান করছে? সে আকাশ থেকে পড়লো। বললো, ভাই, এসব কী বলেন! অপমান তো করে নাই। শুধু চোর বলছে! শুনে আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।

 

সিনিয়র সাংবাদিক ও ডিআরইউ-এর সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মইন উদ্দিন খান লিখেছেন, শমী কায়সারের মোবাইলে ধারণকৃত ‘গোপন’ এমন কী ছিল?

একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মিল্টন আনোয়ার লিখেছেন ‘আসুন আমরা সাবেক অভিনেত্রী শমী কায়সারকে বয়কট করি।’

দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধ শেখ মামুনুর রশিদ লিখেছেন, ‘একজন সাংবা‌দিক অভাবী হতেই পা‌রে। বেতন নিয়‌মিত না পাওয়ায় কিংবা বেকার‌ত্বের কারণে সে ক‌ষ্টে থা‌কে। বাসা ভাড়া, বাচ্চার স্কু‌লের বেতন, বউয়ের বায়না মেটানো, বাবা-মা‌-ভাই-বোনের আবদার পূর‌ণে তার সক্ষমতা কম থাকতেই পা‌রে। হয়তো কেউ কেউ উপায় না পেয়ে দুই চার আনা আয়ের বিকল্প ধান্দাও করে । তাই বলে সে ‘চোর’ আ‌মি অন্তত বিশ্বাস ক‌রি না। চোর কারা, চ‌রিত্রহীন কারা, ধান্দাবাজ, দলবাজ, সুযোগসন্ধানী কারা- সমাজের মানুষ জা‌নে।’

আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি উম্মুল ওয়ারা লিখেছেন, ‘শমী কায়সারকে প্রকাশ্যে প্রেসক্লাবে এসে ক্ষমা চাইতে হবে। শমী কায়সারকে সাংবাদিকরা কেউ নায়িকা মনে করেন না। আমরা মনে করি শমী কায়সার আমাদের ঘরের মেয়ে। শহীদ সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে। শহীদুল্লাহ কায়সার গণমাধ্যমের পথিকৃৎ। আর আজ আমাদের প্রাণপ্রিয় ভাস্তি ঘরের মানুষগুলোকে চোর বানিয়ে ফেলেছেন।’

এদিকে আজ সকাল শমী কায়সার তার ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেন, আমি স্বাভাবিক ভাবেই খুব আপসেট ছিলাম, কিন্তু আমি এমন কোন অসম্মানজনক বক্তব্য দেই নি। আমি উপস্থিত সাংবাদিক ভাইদের প্রতি ‘দুঃখ প্রকাশ’ করি সাথে সাথে এবং প্রিয় সাংবাদিক ভাইদের সঙ্গে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছে, যা আমার অনিচ্ছাকৃত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। আমি নিজেও একজন প্রথিতযশা দেশবরেণ্য সাংবাদিক এর সন্তান। অন্যকোন উদ্দেশ্য আমার কখনো নেই এবং ছিলো না।

এমনকি শমী কায়সারের পেইজে তার পোস্টের নিচেও অনেকে সমালোচনা করেছেন। কিছু সমালোচনা ভাষায় প্রকাশের অযোগ্যও। Abu Sufian নামে একজন কমেন্টে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষ্ঠানে হট্টগোল না করে সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে মোবাইল শনাক্ত করা যেত। আপনি শমী কায়সার সম্মানিত ব্যক্তি গতকাল যা হয়েছে মিডিয়াতে দেখলাম সুন্দর হয়নি আইনগতভাবেও মোবাইল উদ্ধার সম্ভব ছিলো।

উল্লেখ্য গতকাল  বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে  প্রায় অর্ধশত ফটো ও ভিডিও ক্যামেরা এবং শতাধিক মানুষের সামনে চুরি হয় ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই- ক্যাব) প্রেসিডেন্ট শমী কায়সারের দুটি স্মার্টফোন। এ সময় তিনি সাংবাদিকরা মোবাইল চুরি করেছে বলে অভিযোগ করেন এবং তার নিরাপত্তাকর্মীদের দিয়ে সংবাদকর্মীদের দেহ তল্লাশিও করান। এ সময় কেউ কেউ বের হতে চাইলে ‘চোর’ বলে ওঠেন শমী কায়সারের নিরাপত্তাকর্মী। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন সংবাদকর্মীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনুষ্ঠানস্থলে।

পরে সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে কেক নিয়ে আসা লাইটিংয়ের এক কর্মী স্মার্টফোন দুটি নিয়ে গেছেন। ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ দেখার পর সাংবাদিকদের প্রতি ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেন শমী কায়সার।

টিবিজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply