ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি ব্যাংকের ভালো গ্রাহকের প্রণোদনা দিতে আলাদা নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিকগুলোর ভালো গ্রাহকদের জন্য ভালো সুবিধা ও ঋণখেলাপিদের জন্য প্যাকেজ ছাড় দিয়ে আলাদা দুটি বিশেষ নীতিমালা জারি করেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ দুটি নীতিমালা জারি করে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) কাছে পাঠানো হয়।
এর মাধ্যমে ভালো গ্রাহকদের মর্যাদা যেমন বাড়ানো হয়েছে, তেমনি ঋণখেলাপিদের জন্য দেয়া হয়েছে বিশেষ সুবিধা। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েই এ দুটি বিশেষ নীতিমালা জারি করা হয়েছে।
এ ধরনের ইতিবাচক নীতিমালা জারি করায় দেশের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাদের অনেকে এই সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এজন্য সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিতে চান প্রধানমন্ত্রীকে। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে বিচক্ষণতার সঙ্গে শক্তভাবে না ধরলে সবার জন্য কল্যাণমুখী এমন নীতিমালা জারি করা সম্ভব হতো না। তাদের মতে, এটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিদ্যমান সংকটগুলো আর থাকবে না।
নীতিমালা অনুযায়ী, নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করলে ভালো গ্রাহকরা বছর শেষে মোট সুদের ওপর ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন। প্রতি বছর সেরা ১০ গ্রাহকের ছবিসহ বুকলেট বা ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে হবে। ব্যাংকের বার্ষিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের দিতে হবে সম্মাননা সনদ ও ভালো গ্রাহকের স্বীকৃতি হিসাবে পুরস্কার। ভালো গ্রাহকদের এসব সুবিধা পেতে ব্যাংকের কাছে কোনো আবেদনের প্রয়োজন নেই। ব্যাংক নিজ উদ্যোগে ভালো গ্রাহকদের শনাক্ত করে মূল্যায়ন করবে।
অন্যদিকে ঋণখেলাপিদের জন্য দেয়া বিশেষ সুবিধা পেতে হলে খেলাপি গ্রাহককে ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে। এখন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এই সুবিদা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে আবেদন জমা দিতে হবে। সব ক্ষেত্রে সুবিধা নির্ধারিত হবে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে। ঋণ স্থিতির ওপর ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়ন করা যাবে। ঋণ পরিশোধের জন্য ১ বছরের গ্রেস পিরিয়ড পাবেন। সর্বোচ্চ ১০ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া জারিকৃত নীতিমালায় বেঁধে দেয়া শর্তগুলো কেউ অমান্য করলে তার ক্ষেত্রে এ সুবিধা আর বহাল থাকবে না।
ব্যাংক ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলেছেন, নতুন নীতিমালার ফলে ভালো গ্রাহকরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি তারা ভালো গ্রাহকের মর্যাদা ধরে রাখতে উৎসাহিত হবেন। তেমনি যারা এখন ঋণখেলাপি তারাও ভবিষ্যতে ভালো গ্রাহক হওয়ার চেষ্টা করবেন। এদিকে ঋণখেলাপিরা এ দফায় সুযোগ নিয়ে পরে তারা ভালোভাবে ব্যবসা চালিয়ে নিয়মিত ব্যাংকের দেনা শোধে উৎসাহিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে তারাও এক সময় ভালো গ্রাহক হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এতে খেলাপি ঋণ কমে যাবে। আর্থিক খাতে বাড়বে ভালো ঋণগ্রহীতার সংখ্যা। ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যাংকিং খাতে।
ভালো গ্রাহক : ব্যাংকের ভালো গ্রাহকদের প্রণোদনা দিতে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো বিশেষ নীতিমালা জারি করেছিল। ওই নীতিমালা অনুযায়ী ভালো গ্রাহকরা প্রণোদনাগুলো পাচ্ছিল না। যে কারণে এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই নীতিমালা আরও সুনির্দিষ্ট করে এবং তাদের জন্য সুবিধা বাড়িয়ে নতুন নীতিমালা জারি করেছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ভালো গ্রাহকরা যাতে সব ধরনের সুবিধা পান সেগুলো নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
যারা ভালো গ্রাহক হবেন : নীতিমালায় ভালো গ্রাহকদের কিভাবে চিহ্নিত করা হবে সে বিষয়েও একটি দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের শেষে কিছু সূচক পর্যালোচনা করে তাদের নির্বাচন করতে হবে। এর মধ্যে চলমান ঋণগ্রহীতার ঋণ হিসাব ধারাবাহিকভাবে সংশ্লিষ্ট বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ও মঞ্জুরিপত্র বা নবায়নপত্রের শর্ত অনুযায়ী ঋণ হিসাবে লেনদেন সন্তোষজনক হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।
তলবি ঋণগ্রহীতা সংশ্লিষ্ট বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ও এর আগের ৪টি ত্রৈমাসিকে (এক বছর) নেয়া সব তলবি ঋণ নিয়মিত অবস্থায় থাকলে তিনি ভালো গ্রাহক হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
মেয়াদি ঋণগ্রহীতার ঋণ হিসাব বিগত ১ বছরের মধ্যে সব কিস্তি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে নিয়মিতভাবে পরিশোধিত হলে এবং সংশ্লিষ্ট বছরের সেপ্টেম্বর ও এর আগের ৪টি ত্রৈমাসিকে (এক বছর) ঋণ নিয়মিত থাকলে তিনি ভালো গ্রাহক হিসেবে বিবেচিত হবেন।
কোনো ঋণগ্রহীতার একাধিক ঋণ থাকলে প্রতিটি ঋণের জন্য আলাদাভাবে ওইসব শর্ত পালন করলে তিনিও ভালো গ্রাহক হিসেবে বিবেচিত হবেন। সব ক্ষেত্রেই কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিগত এক বছরে কোনো গ্রাহক বা তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে খেলাপি ঋণ থাকলে তিনি ভালো গ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন না।
যেভাবে প্রণোদনা : ভালো ঋণগ্রহীতাদের প্রণোদনা দেয়ার ক্ষেত্রে নিম্নরূপ নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে- চলমান, তলবি ও মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর শেষে বিগত ১২ মাসে (অর্থাৎ বিগত বছরের ১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ভালো গ্রাহকের ঋণের বিপরীতে আদায়কৃত সুদ বা মুনাফার কমপক্ষে ১০ শতাংশ রিবেট বা ছাড় দিতে হবে। পরে প্রতি বছর একই ব্যক্তি ভালো গ্রাহক হিসেবে চিহ্নিত হলে এ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও ভালো গ্রাহককে প্রয়োজন মতো বাড়তি ঋণ সুবিধাও দেয়া যাবে।
এ নীতিমালার আলোকে ব্যাংকের পর্ষদ ভালো গ্রাহকদের প্রণোদনা দেয়ার ব্যাপারে একটি নীতিমালা তৈরি করবে। এ নীতিমালা মেয়াদি ঋণগ্রহীতার ঋণ হিসাব বিগত ১ বছরের মধ্যে সব কিস্তি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে নিয়মিতভাবে পরিশোধিত হলে এবং সংশ্লিষ্ট বছরের সেপ্টেম্বর ও এর আগের ৪টি ত্রৈমাসিকে ঋণ নিয়মিত থাকলে তিনি ভালো গ্রাহক হিসেবে বিবেচিত হবেন। এ নীতিমালা প্রতিটি শাখায় সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে প্রদর্শন করতে হবে।
ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংক কর্তৃক কেস-টু-কেস ভিত্তিতে রিবেট দেয়া অর্থের পরিমাণ হিসাব করে প্রাপ্যতা অনুযায়ী দিতে হবে। এক্ষেত্রে রিবেট বাবদ দেয়া অর্থ সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের নিকট হতে প্রাপ্ত সুদ বা মুনাফা খাত থেকে বা প্রয়োজনীয় প্রভিশন রেখে দিতে পারবে। তবে কোনো বিশেষ কারণে কোনো ঋণগ্রহীতাকে ডিসেম্বরের মধ্যে রিবেট দেয়া সম্ভব না হলে সংশ্লিষ্ট হিসাব বর্ষের আর্থিক প্রতিবেদনে সমপরিমাণ অর্থের জন্য প্রয়োজনীয় প্রভিশন অবশ্যই জমা রাখতে হবে।
পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে ঋণগ্রহীতার প্রাপ্য রিবেট প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। রিবেট সুবিধা পাওয়ার জন্য ঋণগ্রহীতার কোনো আবেদনের প্রয়োজন হবে না। ব্যাংক কর্তৃক স্ব-উদ্যোগে ভালো গ্রাহকদের চিহ্নিত করে প্রাপ্যতা অনুযায়ী রিবেট সুবিধা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তবে ঋণগ্রহীতাকে রিবেট দেয়ার আগে ঋণগ্রহীতার নিকট হতে এ মর্মে প্রত্যয়ন গ্রহণ করতে হবে যে, ঋণগ্রহীতার নিজ নামে বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে অপর কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিগত এক বছরে বিরূপমানে শ্রেণীকৃত কোনো ঋণ ছিল না এবং বর্তমানেও নেই। ভালো ঋণগ্রহীতাগণ যাতে সময়মতো ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে উৎসাহিত হয় সে লক্ষ্যে তাদের প্রাপ্য রিবেট যথাসময়ে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিষয়টি শাখা পর্যায়ে বা আঞ্চলিক পর্যায়ে নিষ্পত্তি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দিতে হবে।
এক্ষেত্রে সার্কুলারের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে রিবেট হিসাবায়ন ও প্রদানের বিষয়গুলো ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণেরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ভালো ঋণগ্রহীতাদের ঋণ তথ্য পরবর্তীতে নিয়মিত থাকা সাপেক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিতে ‘স্ট্যান্ডার্ড গুড বরোয়ার’ বা এসটিডি হিসেবে রিপোর্ট করতে হবে।
যেসব গ্রাহক ঋণ পুনঃতফসিলকৃত বা পুনর্গঠন করবেন তিনি এসব সুবিধা পাবেন না।
যেসব প্রণোদনা : ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী ভালো গ্রাহকদের বিশেষ সুবিধা (রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ডিসকাউন্ট সুবিধা ইত্যাদি) প্রদান করতে হবে। প্রতি বছর ব্যাংক থেকে দিতে হবে বিশেষ সনদ। ব্যাংকের সেরা ১০ জন ভালো গ্রাহকের ছবিসহ তাদের ব্যবসা সফলতার সংক্ষিপ্ত চিত্র প্রকাশ করতে হবে ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে। এছাড়া কোনো গ্রাহক দীর্ঘ সময় ধরে ভালো ঋণগ্রহীতা থাকলে সেই গ্রাহকদের ছবি, প্রোফাইল ইত্যাদির সমন্বয়ে ব্যাংক থেকে বিশেষ বুকলেট বা ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে হবে। ব্যাংকগুলো বার্ষিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভালো ঋণগ্রহীতাদের স্বীকৃতি বা পুরস্কার প্রদান করে তাদের সম্মাননা জানানোর ব্যবস্থা করতে পারে।
ভালো গ্রাহকদের দেয়া রিবেট সংক্রান্ত তথ্য প্রতি হিসাব বর্ষ শেষে পরবর্তী বছরের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা ২০১৯ হিসাব বর্ষ হতে কার্যকর হবে। এ নীতিমালা জারির মাধ্যমে এ বিষয়ে আগের সব নির্দেশনা বাতিল করা হয়েছে।
খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে বিশেষ সুবিধা : বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ খেলাপিদের ঋণ নবায়নে বিশেষ নীতিমালায় প্যাকেজ সুবিদা দেয়া হয়েছে। প্রায় সব খাতে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ নবায়ন করতে হবে। অনিচ্ছাকৃত একজন ঋণ খেলাপি কেস টু কেস বিবেচনায় ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ সময় পাবেন ১০ বছর। ঋণের সুদ হবে ৯ শতাংশ। এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড সুবিধাও পাবেন। অর্থাৎ এক বছর ঋণ বা কিস্তি পরিশোধ করতে হবে না।
এর আগে ঋণ স্থিতির ন্যূনতম ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট ঋণের বিপরীতে আগে জমা দেয়া কিস্তির অর্থ ডাউন পেমেন্ট হিসেবে বিবেচনা হবে না। এ সার্কুলার জারির ৯০ দিনের মধ্যে ঋণগ্রহীতাকে পুনঃতফসিলের জন্য আবেদন করতে হবে। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলে কোনো আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে অনারোপিত সুদের সম্পূর্ণ অংশ এবং ইন্টারেস্ট সাসপেন্স হিসাবে রক্ষিত সুদ মওকুফ করা যাবে।
তবে, মওকুফকৃত সুদ পৃথক ব্লকড হিসাবে (সুদবিহীন) স্থানান্তর করতে হবে। পুনঃতফসিলের শর্তানুযায়ী সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধের পর ব্লকড হিসাবে রক্ষিত সুদ চূড়ান্ত মওকুফ হিসেবে বিবেচিত হবে। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ এর আওতায় পুনঃতফসিল করা যাবে। এর পরে যেসব ঋণ খেলাপি হয়েছে সেগুলো এর আওতায় নবায়ন করা যাবে না।
বাণিজ্য খাতের গম, খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্যতেল ও রিফাইনারি, জাহাজ শিল্প খাতের শিপ-ব্রেকিং ও শিপ-বিল্ডিং এবং লৌহ ও ইস্পাত শিল্প খাতের ব্যাংক ঋণখেলাপিরা এ সুবিধা পাবেন। বিশেষায়িত ব্যাংকের অকৃষি খাতের আমদানি-রফতানিতে সম্পৃক্ত শিল্প ঋণ এবং অন্যান্য খাতের ব্যাংকের বিশেষ নিরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী, যাদের ঋণ নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে মন্দ বা ক্ষতিজনক মানে শ্রেণীকৃত হয়েছে, তারা পুনঃতফসিল বা এক্সিট সুবিধা পাবেন।
নীতিমালায় বলা হয়, ঋণ স্থিতির (মওকুফ অবশিষ্ট) ওপর কস্ট অব ফান্ডের সঙ্গে আরও ৩ শতাংশ যোগ করে মোট সুদের হার নির্ধারিত হবে। তবে সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ওই হারে সুদ আরোপ কার্যকর হবে। এটা খেলাপি থেকে এককালীন বেরিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এছাড়া ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে মাসিক বা ত্রৈমাসিক কিস্তি নির্ধারণ করতে হবে। প্রচলিত নিয়মানুযায়ী আনুপাতিক হারে আসল এবং সুদ বিবেচনায় নিয়ে কিস্তির পরিমাণ নির্ধারিত হবে। ঋণ পরিশোধের জন্য ৯টি মাসিক কিস্তির মধ্যে ৬টি মাসিক কিস্তি বা ৩টি ত্রৈমাসিক কিস্তির মধ্যে ২টি ত্রৈমাসিক কিস্তি অনাদায়ী হলে এ সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে এবং সংশ্লিষ্ট ঋণহিসাবকে মন্দ বা ক্ষতিজনক মানে শ্রেণীকরণ করতে হবে।
ব্যাংক কর্তৃক পুনঃতফসিল সুবিধা প্রদানের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহক সোলেনামার মাধ্যমে চলমান মামলার কার্যক্রম স্থগিতের জন্য যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরবর্তীতে কোনো গ্রাহক প্রদত্ত সুবিধার কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে তার অনুকূলে প্রদত্ত সব সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের বিরুদ্ধে স্থগিত মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।
নীতিমালার আওতায় ঋণ পুনঃতফসিলের পর ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নতুন ঋণ নিতে পারবে গ্রাহক। এক্ষেত্রে ব্যাংক সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে তাদের প্রচলিত ঋণ নীতিমালা অনুসরণ করবে। নতুনভাবে প্রদত্ত ঋণ যথানিয়ম পরিশোধে ব্যর্থ হলে এ সার্কুলারের আওতায় প্রদত্ত সকল সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য কস্ট অব ফান্ড রিকভারি নিশ্চিতকরণ বা ঘাটতি বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আগের নির্দেশনা বলবৎ থাকলেও আলোচ্য সার্কুলারের আওতায় পুনঃতফসিল বা এককালীন এক্সিট সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে এ সার্কুলারের নির্দেশনা কার্যকর হবে। এ সার্কুলারের আওতায় ঋণগ্রহীতার আবেদন প্রাপ্তির তারিখ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ব্যাংক কর্তৃক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে বিশেষ নিরীক্ষার প্রয়োজন হবে সেসব ক্ষেত্রে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রাপ্তির তারিখ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়া এ সার্কুলারের আওতায় পুনঃতফসিলকৃত বা এককালীন এক্সিট সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণগুলোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঋণগুলো বিশেষ হিসাবের মানে শ্রেণীকরণ করতে হবে এবং ওই ঋণগুলোর বিপরীতে ১ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। পুনঃতফসিলকৃত ঋণ সিআইবি’তে বিশেষভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। এ সুবিধার আওতায় সংশ্লিষ্ট ঋণের বিপরীতে আরোপিত সুদ প্রকৃত আদায় ব্যতিরেকে আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
Leave a reply