আজ ২১ মে বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈতবেঞ্চে দুধ-দইয়ে অনুজীব, কীটনাশক ও সীসার বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআই আদালতে উল্লেখিত দুধ ও দইয়ের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নামসহ ন্যাশানাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরীর প্রধান প্রফেসর ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী তাঁর গবেষণার রিপোর্ট সকাল ১০.৩০ সশরীরে উপস্থিত হয়ে হলফমূলে আদালতে জমা দেন। নামসহ রিপোর্টটি জমা দেওয়ার জন্য আজ দিন ধার্য ছিল।
আজ বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম ও বিএসটিআই এর আইনজীবী ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দুদকের আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব আদালতকে জানান দুদক নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআই এর কাছে দুদক চিঠি দিয়ে নাম জানতে চেয়েছেন।
এর আগে আদালত দেখেন গত ১১ ফেব্রুয়ারি আদেশে ন্যাশানাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির প্রধান প্রফেসর ডা. শাহনিলা ফেরদৌসীকে নোটিশ জারীর ১৫ দিনের মধ্যে তাঁর গবেষণালব্ধ রিপোর্টটি আদালতে জমা দিতে বলেছিলেন। তিনি তখন নির্দিষ্ট সময়ে রিপোর্ট জমা না দেওয়ায় গত ১৫ মে প্রফেসর ডা. শাহনীলা ফেরদৌসীকে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিলেন।
আজ আদালত বলেন প্রফেসর ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী কোন অভিযুক্ত নন, ওনাকে আমরা আদালতকে সহযোগিতা করার জন্য ডেকেছি।
প্রফেসর ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী জানান ন্যাশানাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নেদারলয়ান্ডের অর্থায়নে এই গবেষণা কাজ করেন, ২০১৫ সন থেকে তাঁরা এই গবেষণা কাজ করে আসছেন।
তাঁদের গবেষণা কাজ FAO ( আন্তর্জাতিক ফুড ও এগ্রিকালচার অরগানাইজেশান) আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ করে। আজকের তাঁর রিপোর্টের মধ্যে যেই সমস্ত কোম্পানি নিয়ে কাজ করেছেন তার মধ্যে মিল্কভিটা, প্রাণ, আড়ং,ফার্ম প্রেশ,স্বপ্নো অর্গানিক, আফতাব ডেইরি মিল্ক নাম করা সব কোম্পানিও আছে। তাঁর গবেষণায় দইয়ের ৩০ টি, পশুখাদ্যের ৩০ টি, প্যাকেটজাত দুধ ৩১, রো কাউ মিল্ক ৯৬ টির কোম্পানি ও ব্যক্তি বিশেষের নাম উল্লেখ আছে।
আদালত আজ বিএসটিআইকে বলেন আপনারা এতদিন কী কাজ করেছেন, এসি রুমে কাজ, কোন গবেষণাই তো আপনারা করছেন না। ন্যাশানাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি করতে পারলে আপনারা পারছেন না কেন।
এর আগে ১৫ আদালত শুনানি শেষে বলেন মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না, মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক অনুজীব সহ দুধ দই উৎপাদনকারীদের শাস্তি হতে হবে। সাধারণ মানুষকেও এই জানিয়ে সচেতন করতে হবে। রিপোর্টের বিষয় ওয়েবসাইটেও দিতে হবে। আর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইকে ক্ষতিকারক দুধ ও দইয়ের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নামসহ তাদের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী ২৩ জুন আদালতে দাখিল করতে আদেশ দিয়েছেন ।
বিজ্ঞ আদালত ১১ ফেব্রুয়ারি সোমবার দৈনিক প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার ও দৈনিক কালের কন্ঠে দুধ-দইয়ে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার অনুজীব,কীটনাশক, সিসা, গরুর দুধে ও বিষের ভয়, শিরোনামে রিপোর্টের ভিত্তিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল দিয়েছিলেন এবং তিন মাসের মধ্যে কমিটি গঠন করে ব্যবস্থ নিতে আদেশ দিয়েছিলেন। গত ৮ মে কোর্টে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানান তারা ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করে কার্যক্রম শুরু করেছেন। কোর্ট কারা এর সাথে জড়িত কারা তাদেরকে চিহ্নিত করে রিপোর্ট দিতে বলেছিলেন।
আজ রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না।
প্রফেসর ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার শাহনীলা ফেরদৌসী। ফুড সেফটি অথোরিটির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। বিএসটিআইয়ের পক্ষে আইনজীবী সরকার এম আর হাসান ( মামুন),দুদকের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব।
উল্লেখ্য উপরোক্ত বিষয়টি অবগত হয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি আদালত দুধ ও দইয়ের উৎপাদনকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কেন সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সেই মর্মে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্ব প্রণোদিত হয়ে রুল করে কারণ জানতে চান। এই মর্মে চার সপ্তাহের রুল জারী করেন এবং ১৫ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হলো তার অগ্রগতি প্রতিবেদন জানতে আদেশ দেন। রুলের বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, খাদ্য সচিব, স্বরাষ্ট সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, মৎস্য ও প্রাণী সচিব ও কৃষি সচিব চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিবেন। একই সময়ে দুদকের চেয়ারম্যান এই বিষয়ে কি ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছেন তাও জানানোর আদেশ হয়।
উল্লেখ্য ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি তাদের এক গবেষণা তথ্য অনুযায়ী গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক, দইয়ে ক্ষতিকর সিসা ও গোখাদ্যেও মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গেছে বলে জানান। এই বিষয়গুলো মানবদেহের দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক, মানুষের কিডনি, লিভারসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, এই কারণেই আদালত স্বপ্রণোধিত হয়ে জনস্বার্থে এই রুল জারী করেছিলেন।
Leave a reply