আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষকে স্বস্তি দিতে ট্রেনের অর্ধেক টিকিট অনলাইনে দেয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত ২৮ এপ্রিল ‘রেলসেবা’ একটি অ্যাপ উদ্বোধন করেন রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
কিন্তু ‘সার্ভারে ত্রুটি’, ‘বিক্রি শুরুর আগেই টিকিট শেষ’, ‘টিকিট না দিয়েই টাকা কেটে রাখা’— এমন অসংখ্য অভিযোগ রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়েতে জমা পড়ছে। এসব অভিযোগের কোনো সুরাহা না করেই আজ শুরু হয়েছে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি।
২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে কাজ করছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) লিমিটেড বাংলাদেশ। কাউন্টারে রেলওয়ের টিকিট বিক্রির সফটওয়্যার ব্যবস্থাপনা ও অনলাইনে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানটি ‘রেলসেবা’ নামে টিকিট বিক্রির অ্যাপের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বেও রয়েছে।
‘রেলসেবা অ্যাপস’-এর মাধ্যমে ৫০ শতাংশ টিকিট মোবাইল ফোনের এসএমএস, ওয়েবসাইট ও ফিচার অ্যাপসের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে। অথচ গ্রাহকরা সেবা নিতে গিয়ে পড়ছেন উল্টো ঝামেলায়।
যেসব গ্রাহক অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটবেন বলে ভেবেছেন তারা স্টেশনে গিয়ে লাইনে না দাঁড়িয়ে বাসায় বসে সময় গুনছেন কখন সকাল ৯টা বাজবে।
কিন্তু সকাল ৯টায় সার্ভারে ঢুকতে পারছেন না অধিকাংশ গ্রাহক। আর যদিও কোনোভাবে প্রবেশ করা সম্ভব হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে সার্ভার থেকে জানানো হচ্ছে টিকিট নেই।
আবার অনেকে টিকিটের জন্য টাকা দিচ্ছেন অথচ টিকিট পাচ্ছেন না। এর পর ৯টা ৩ মিনিটে সিট নির্বাচন করতে গেলে দেখায় কোনো সিট নেই।
ইমরান হোসেন নামে এক গ্রাহক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২ মিনিটের মধ্যে ৫০ শতাংশ টিকিট কীভাবে শেষ হয়ে যায়? এটি কিভাবে সম্ভব?
এদিকে অ্যাপে অনেক ভুতুড়ে কাণ্ডকারখানা ঘটারও অভিযোগ করেছেন অনেকেই। ঢাকা থেকে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে চট্টগ্রামে যাওয়ার টিকিট কিনতে অ্যাপে তিনবার ঢুকেও টিকিট কিনতে ব্যর্থ হন এক যাত্রী।
সে টিকিট না পেলেও টিকিটের মূল্য কেটে নেয়া হয়েছে। সেটি আবার অনেক বেশি। একে তো টিকিট পাননি, তার ওপর ৭৪৫ টাকার মূল্যের টিকিটের জন্য দুই হাজার ২০০ টাকা কেটে নেয়ার অভিযোগ রেল মন্ত্রণালয়কে তিন দিন আগে জানিয়েছেন তিনি।
রানা ইসলাম নামে এক যাত্রী অভিযোগ করেন, গত রোববার একতা ট্রেনের টিকিট চেয়েছি, দেয়া হয়েছে দ্রুতযান এক্সপ্রেসের। শুধু ঘোষণা দিয়েই ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন রানা ইসলাম।
এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জেল হোসেন জানান, বিষয়টি কারিগরি সংক্রান্ত। এ বিষয়ে সিএনএস-বিডি কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে।
সিএনএস-বিডির নির্বাহী পরিচালক (ট্রেন টিকিট) অনিন্দ্য সেনগুপ্ত জানান, অনলাইন টিকিট বিক্রির সাইটে একসঙ্গে প্রচুর ট্রাফিক আসে। এ জন্য এ ধরনের সাইটের নিয়মিত মেইনটেন্যান্স দরকার।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ধরনের সাইট প্রতিদিন দেড়-দুই ঘণ্টা ধরে মেইনটেইন করা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে সে সুযোগ কম। তার পরও আমরা সীমিত অবকাঠামো দিয়ে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সিএনএস-বিডির মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) কামরুল ইসলাম জানান, একসঙ্গে ৫০০ জন যেখানে ঢুকতে পারে, সেখানে ১০ হাজার ব্যক্তি ঢুকতে চাইলে তো পারবে না। তারা ঢুকতে চাইলে আমরা তাদের একটি কিউ সিস্টেমে রাখছি। এর পর পর্যায়ক্রমে তাদের সেবা দেয়া হচ্ছে।
এমন না যে আমরা টিকিট বিক্রি করছি না। সংরক্ষণ করে রাখার পদ্ধতি এখন আর নেই। কাজেই পুরো বিষয়টি তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরির ওপর নির্ভরশীল।
Leave a reply