মার্কিন সংবাদমাধ্যম ডেইলি বিস্ট ভারতে নতুন করে উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো নরেন্দ্র মোদির বিপুল বিজয়ের ঘটনায় একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।
“Modi’s India Landslide Should Scare the Sh*t Out of the Rest of Us” শিরোনামের নিবন্ধটিতে লেখক ম্যাথু ক্লেফিল্ড তার বিশ্লেষণের মাধ্যমে বলতে চেয়েছেন, মোদি ও তার দলের জয় আসলে বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
ক্লেফিল্ড লিখেছেন, ভারতের ভোটাররা মোদি ও তার দলকে নতুন করে পাঁচ বছরের জন্য বিরাট ব্যবধানে বিজয়ী করেছেন। কিভাবে এমনটা ঘটলো সেটা খুব রহস্যের বিষয় নয়। তবে এই জয় বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর জন্য এক ধরনের সতর্কবার্তা হতে পারে।
লেখকের মতে, মূলত ধর্মীয় বিভাজনের যে রাজনীতি মোদি ও তার দল বিজেপি করে এসেছে সেটিকে ভারতের সিংহভাগ মানুষ গ্রহণ করেছেন। এটাই উদ্বেগের কারণ।
তিনি লিখেছেন, “এই নিবন্ধ লেখার সময় বিজেপির জয় নিশ্চিত। শুধু তা-ই নয়, তারা ২০১৪ সালের চেয়েও বড় ব্যবধানে জয় পাওয়ার পথে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই জয়কে ভারতে ঘৃণা আর বিভাজনের রাজনীতির জয় হিসেবেই দেখতে হবে; যা মোদি ও বিজেপি গত ৫ বছরে তাদের পক্ষে খুবই সফল অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করে এসেছেন।”
ক্লেফিল্ড লিখেছেন, “হিন্দুত্বের দ্বারা অনুপ্রাণিত হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শ বর্তমানে ফ্যাসিবাদী একটি মতাদর্শ হিসেবে আভির্ভূত হয়েছে। ফ্যাসিবাদের অনেকগুলো মৌলিক চরিত্র তাদের মধ্যে রয়েছে। মোদি ও বিজেপি মনে করে ভারতের সরাসরি হিন্দু রাষ্ট্র হওয়া উচিত। নির্বাচনী প্রচারের সময় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেছিলেন যে, তাদের দল দেশ থেকে প্রতিটি ‘বহিরাগতকে’ বহিষ্কার করবে, শুধু বৌদ্ধ, হিন্দু আর শিখদের ছাড়া।”
ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হবে, বা হওয়া উচিত- এমনটি যারা মনে করেন মোদি ও তার দলের আরো বড় ব্যবধানে জয় তাদের চিন্তায় বড় ধরনের এক ধাক্কা বলে মনে করছেন ম্যাথু ক্লেফিল্ড।
মোদির মতো উগ্রপন্থার লালনাকারীর এমন বিপুল জয়ের পেছনে বিরোধীদের ব্যর্থতাকেও দায়ী করা হয়েছে নিবন্ধে। কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। গরু ইস্যুতে মুসলিমদের হত্যা করা এবং কাশ্মিরের পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ অবস্থার দিকে অগ্রসর হওয়ার মতো বিষয় এখন ভারতে খুবই স্বাভাবিকে পরিণত হয়েছে।
এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প-ইফেক্টের সাথে মোদি-ইফেক্টকে তুলনা করেছেন লেখক। একসময় যেসব কাজ বা অপরাধকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হতো সেগুলো এখন ভারতে নৈমিত্বক ঘটনা। এবারের নির্বাচনে ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে একটি মসজিদে হামলায় জড়িত এক প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, আর গুজরাটের দাঙ্গার নেপথ্য ব্যক্তিকে তো ভারতবাসী দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী বানালেন।
সবশেষে লেখকের বক্তব্য, “আমার মতো আরও যারা বিশ্বাস করেন যে, মোদি সরকারের প্রথম ৫ বছর ছিলো হিন্দুত্ববাদী আদর্শের ‘পরীক্ষানিরীক্ষার সময়’। এই সময়টাতে তারা দিল্লীর আকাশে একটা বেলুন ছেড়ে বুঝার চেষ্টা করেছে তারা আসলে কতদূর পর্যন্ত এগুতে পারবে। আজকের সাফরন বিপ্লব ‘খারাপ’ এর চেয়েও খারাপ কিছু। এটা আসলে সবাইকে উদ্বিগ্ন করা উচিত।”
Leave a reply