ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে বুধবার থেকে। শনিবার বিক্রি হয় ৩ জুনের টিকিট। আজ শেষ দিন বিক্রি হবে ৪ জুনের টিকিট। অগ্রিম টিকিটের জন্য ২০-২২ ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আসনের তুলনায় চাহিদা বেশি বলে বহু চেষ্টার পরও অনেকে টিকিট পাননি।
ফলে বাদুড়ঝোলা হয়েই গ্রামে যেতে হবে টিকিটবঞ্চিতদের। প্রতিবারের মতো এবারও ছাদে ঠাসাঠাসি ভিড় হবে।
জানা গেছে, কমলাপুরসহ রাজধানীর ৫টি স্টেশনে টিকিটের জন্য হাহাকার। তবে শেষ সুযোগ একটি থাকছে। ২২ থেকে ২৬ মে পর্যন্ত অনলাইন ও কাউন্টারে বিক্রি না হওয়া টিকিট ২৭ মে থেকে ক্রমান্বয়ে পুনরায় অ্যাপ ও কাউন্টার থেকে বিক্রি হবে। ঈদযাত্রা শুরু হবে ৩১ মে থেকে। এদিকে ‘রেলসেবা’ নামক অ্যাপ নিয়ে ধীরগতির অভিযোগ রয়েছে। অ্যাপে কারও কারও টাকা কেটে নিলেও টিকিট মেলেনি। ফেরত পাচ্ছেন না টাকা।
তবে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়াজাহান জানিয়েছেন, কাউন্টার কিংবা অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট পাচ্ছে না- এমন অভিযোগ সত্য নয়। আমরা প্রতিদিন টিকিট বিক্রি করছি। সীমিত টিকিট, তাই কাউন্টার থেকে সবাইকে টিকিট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অ্যাপে প্রচণ্ড চাপ।
একই সঙ্গে প্রায় ৩ লাখ মানুষ হিট করছে। যাদের মধ্যে ৫ থেকে ৭ শতাংশ টিকিট কাটতে পারছে। অ্যাপেও সীমিত টিকিট রয়েছে। যাদের টাকা কেটে নেয়া হয়েছে, তাদের টাকা ৮ দিনের মধ্যে নিজ নিজ নম্বরে চলে যাবে। তিনি বলেন, ‘অ্যাপ ও কাউন্টারে বিভিন্ন ট্রেনের বিশেষ করে শোভন সিট, শোভন চেয়ারের কিছু টিকিট রয়েছে, যা ২৭ মে থেকে শুধু কাউন্টারে বিক্রি করা হবে। সীমিত টিকিট থাকায় প্রতিবছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষ ট্রেনের ছাদ কিংবা ঝুলে গ্রামে যান। এটা দুঃখজনক।’
রেলওয়ের টিকিটি বিক্রয়ে ই-সেবা দিয়ে আসছে সিএনএস ডিবি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর নির্বাহী পরিচালক মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান সরোয়ার যুগান্তরকে জানান, কাউন্টার এবং অ্যাপের মাধ্যমে ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন ৩১ হাজার ৩৮০টি টিকিট বিক্রি জন্য বরাদ্দ রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ১১ হাজার ১৪টি টিকিট অ্যাপ থেকে দেয়া হচ্ছে। এর বিপরীতে প্রায় ৩ লাখ মানুষ একই সঙ্গে অ্যাপে প্রবেশের চেষ্টা করছেন, বারবার হিট করছেন। কিন্তু টিকিট পাচ্ছেন মাত্র ৫ শতাংশ লোক। বাকি ৯৫ শতাংশ লোক অভিযোগ করছেন।’ তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার, সীমিত টিকিটের বিপরীতে কেউ যদি অ্যাপে প্রবেশ করতে না পারেন, সেটা নিশ্চয় সিএনএস’র কোনো দুর্বলতা নয়। টিকিট বিক্রিতে কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই। কারণ, টিকিট বিক্রির কোনো অর্থের সঙ্গে সিএনএসের সম্পর্ক নেই।’
অ্যাপে ধীরগতি রয়েছে এবং এ অ্যাপে টাকা কেটে নিলেও টিকিট পাচ্ছেন না- এমন অভিযোগের বিষয়ে জিয়াউল আহসান সরোয়ার বলেন, ‘ধীরগতি নয়, যারা প্রবেশ করতে পারছেন, তারা দ্রুত সময়ের মধ্যেই টিকিট কাটতে পারছেন। যারা প্রবেশ করতে পারছেন না, তাদের বিলম্ব হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আর টাকা কেটে নিচ্ছে আলাদা প্রতিষ্ঠান। সিএনএস টাকা কেটে নিচ্ছে না। তবে যাদের টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে, তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘টিকিট বিক্রিতে স্বচ্ছতার জন্য কমলাপুর স্টেশনে ডিজিটাল ডিসপ্লে লাগানো হয়েছে। কতটি টিকিট বিক্রি হচ্ছে, কে নিচ্ছেন, তার মোবাইল নম্বরসহ তথ্য-উপাত্ত রয়েছে সিএনএস’র কাছে। শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনলাইনে ৮ হাজার ৯২৯টি এবং কাউন্টার থেকে ১২ হাজার ৮২৮টি টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। অবিক্রীত টিকিট যাত্রীরা শেষ দিন পর্যন্ত অ্যাপ ও কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।’
শনিবার কমলাপুরসহ বাকি স্টেশনগুলো ঘুরে দেখা যায়, টিকিটপ্রত্যাশীদের স্রোত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কারও ভাগ্যে টিকিট জুটেছে। আবার কারও ভাগ্যে জুটছে না। একেকটি টিকিট সংগ্রহ করতে ২০-২২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। অনেকে লাইনে দাঁড়িয়েও অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটার চেষ্টা করছেন। কেউ বারবার চেষ্টা করেও অ্যাপে প্রবেশ করতে পারছেন না। অনেকে প্রমাণ দেখিয়ে বলেন, ‘অনেক কষ্টে অ্যাপে প্রবেশ করেছিলাম। তারা টাকা কেটে নিয়েছে; কিন্তু টিকিটপ্রাপ্তির মেইল পাইনি।’
এবার টিকিট বিক্রি শুরুর আগে রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রতিবছরের মতো এবার কাউকে ভিআইপি টিকিট দেয়া হবে না। মোট টিকিটের মধ্যে ৫০ শতাংশ অ্যাপ ও বাকি ৫০ শতাংশ কাউন্টার থেকে বিক্রি হবে। তার এমন হুশিয়ারির পর রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ ৫ শতাংশ টিকিটও কাটতে পারছেন না স্টাফরা। কেউ কেউ বলছেন, ভিআইপি টিকিট দেয়া হবে না বলে নির্দেশ দেয়া হলেও সেই নির্দেশ যথাযথ পালন হচ্ছে না। ভিআইপি নামক ৫ শতাংশ টিকিটি নিয়ে বেশ লুকোচুরি হচ্ছে। অ্যাপ কিংবা কাউন্টার থেকে যথাযথ নিয়মে এসি চেয়ার ও কেবিনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে, ভিআইপি কোটার নামে টিকিটের অধিকাংশ রেখে দেয়া হচ্ছে। অ্যাপে মোট টিকিটের ৫০ শতাংশ দেয়া হলে ১৫ হাজার ৬৯০টি টিকিট হওয়ার কথা। অ্যাপে দেয়া হয়েছে ১১ হাজার ১৪৫টি। আর ৫টি স্টেশনের ৩৬টি কাউন্টার থেকে দেয়া হচ্ছে ১২ হাজার ৭৪৫টি। কাউন্টার ও অ্যাপে বরাদ্দ ২৩ হাজার ৮৯০টি টিকিটের মধ্যে শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ২১ হাজার ৮২৮টি টিকিট বিক্রি হয়েছে।
সাধারণ যাত্রীদের প্রশ্ন- প্রতিদিন ৭ হাজার ৪৯০টি টিকিট কেন প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না। অ্যাপে বিক্রি করা টিকিট ডিজিটাল ডিসপ্লেতে দেখানো হলেও কাউন্টার থেকে বিক্রি করা টিকিট কেন ডিসপ্লেতে দেখানো হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, রেলপথমন্ত্রীর নির্দেশ, টিকিট বিক্রিতে সব মানুষের সমান সুযোগ যেন বাস্তবায়ন হয়। তার নির্দেশ বাস্তবায়নে কেউ যেন ভাঁওতাবাজি না করেন।
Leave a reply