অপেক্ষার প্রহর শেষ। আজ বাদে কালই ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসে গড়াচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে ১০ দল। সাফল্য পেতে প্রতিটি দলই চেয়ে নিজেদের সেরা তারকার দিকে। বিশ্বমঞ্চে কোন দলের জন্য কোন খেলোয়াড় এক্স-ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারেন আমাদের আয়োজন তা নিয়েই।
ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)
বল টেম্পারিং কেলেংকারির দায়ে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সবে দলে ফিরেছেন ওয়ার্নার। চাপে থাকবেন হয়তো। তবে গেল এক বছরে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন-নিন্দা, সমালোচনা পাশ কাটিয়ে চলার কতটা ক্ষমতা তার। নিষেধাজ্ঞা শেষে আইপিএলে খেলতে নেমে ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে ১২টি ম্যাচ খেলেছেন। একটি সেঞ্চুরি ও আটটিতে পঞ্চাশের ওপর রান করেছেন।
আর ওয়ানডে রেকর্ড? দুই বছর আগের রেকর্ড ঘাঁটলেই দেখা যাবে, কীভাবে ম্যাচের পর ম্যাচ বোলারদের দুঃস্বপ্ন হয়েছেন ওয়ার্নার। ১২ মাসে ৮টি ওডিআই সেঞ্চুরি করেন। দুঃস্বপ্ন পেছনে ফেলতে পারলে ৩২ বছরের বিধ্বংসী ওপেনারই অস্ট্রেলিয়াকে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ এনে দিতে পারেন।
রশিদ খান (আফগানিস্তান)
লেগস্পিন কতটা ভয়ংকর হতে পারে, রশিদ খান তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেন। বয়স মাত্র ২০। তবে এরই মধ্যে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে- দুই ফরম্যাটের ক্রিকেটেই যথার্থ বিশ্বতারকা হয়ে উঠেছেন। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বোলিং র্যাংকিংয়ে এখন আছেন একনম্বরে। ওয়ানডে বোলিং র্যাংকিংয়ে তিন নম্বরে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যেখানে ব্যাটসম্যানরা দানব হয়ে ওঠেন, সেখানে রশিদ গড়ে প্রতি ওভারে ৬ রানের বেশি দেন না। প্রতি ১৫ বলে একটি করে উইকেট তুলে নেন।
শুধু বোলিং নয়। ব্যাটিংয়ে সাত বা আট নম্বরে নেমে ঝড়ো রান করার অসামান্য ক্ষমতা রয়েছে এ আফগান তরুণের। যে কারণে তিনি ওডিআই অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ে দুই নম্বরে। মাঠে যদি স্পিন ধরে, প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠতে পারেন রশিদ খান।
সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
অভিজ্ঞতা ও হালের পারফরম্যান্স- দুই বিবেচনাতেই সাকিব সন্দেহাতীতভাবে বর্তমানে ওয়ানডে ক্রিকেটের অন্যতম শীর্ষ তারকা। এ মাসেই বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে টাইগারদের জয়ের পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ম্যাচ খেলেছেন মাত্র তিনটি, দুটোতেই অর্ধশত রান করেছেন। বল হাতে রান দিয়েছেন খুবই কম।
চোটের কারণে ফাইনাল খেলতে না পারলেও ওই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্সের ওপর ভর করে আবারো আইসিসির ওয়ানডে অলরাউন্ডারের র্যাংকিংয়ের শীর্ষে ফিরেছেন। ১৩ বছর আগ ওডিআই ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ ম্যাচ খেলেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনটি। বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই বাংলাদেশের কোচ স্টিভ রোডসও মনে করেন, এবার সাকিব হবেন তার ট্রাম্প কার্ড।
জস বাটলার (ইংল্যান্ড)
জস বাটলার এখন একদিনের ক্রিকেটে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাটসম্যান কেন? সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান ঘাঁটলেই তা বোঝা যায়। ওয়ানডেতে তার স্ট্রাইক রেট ১১৯.৫৭। যেকোনো ইংলিশ ক্রিকেটারের চেয়ে বেশি। গেল ১০৮ ইনিংসে ১১৭টি ছয় মেরেছেন। বলা হচ্ছে, কেভিন পিটারসনের পর দলে মারকুটের ভূমিকা নিয়েছেন বাটলার। অসম্ভভ জোরে বল পেটান তিনি। তবে একেবারেই অসাবধান নন। বোলারকে বুঝে সেই মতো খেলার দক্ষতাও আছে। যত দিন যাচ্ছে, ততই ভালো হচ্ছে তার ব্যাটিং। ইংল্যান্ড এখনো কোনো ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতেনি। সেই খরা যদি কাটে, তা হলে দলের প্রধান কাণ্ডারি হয়তো হয়ে উঠবেন তিনিই।
জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত)
জাসপ্রিত বুমরাহর বোলিং অ্যাকশন একেবারেই আলাদা। ওভারের পর ওভার দারুণ লাইন ও লেন্থ বজায় রেখে বল করতে পারেন তিনি। নির্ভুল ইয়র্কার দেয়ার অসামান্য দক্ষতা আছে। ছয় বছর আগে ভারতের সাবেক এবং আইপিএল দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের কোচ জন রাইটের চোখে পড়েন বুমরাহ। এরপর এ ক’বছরে মুম্বাইয়ের তো বটেই, ভারতীয় জাতীয় দলেরও সেরা বোলার হয়ে উঠেছেন। এখন আইসিসি ওডিআই বোলিং র্যাংকিংয়ে একনম্বরে তিনি। এবারের বিশ্বকাপে সাফল্যের জন্য অধিনায়ক বিরাট কোহলির তুরুপের তাস হতে পারেন জাসপ্রিত।
কেন উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড)
ব্যাটসম্যান, ফিল্ডার, অধিনায়ক ও ব্যক্তিত্ব হিসেবে কেন উইলিয়ামসন যেকোনো দলের জন্য স্বপ্নের ক্রিকেটার। টেকনিকের দিক দিয়ে তার ব্যাটিং প্রায় নিখুঁত। একটু দেরি করে ব্যাট হাঁকান। সোজা ব্যাটে যেমন অসামান্য শট খেলতে পারেন, তেমন মাঠের যেকোনো দিকে বল পাঠাতে সক্ষম। স্পিন যেভাবে সামলাতে পারেন, পেস বলের মোকাবেলাতেও সমান পারদর্শী। ইতিমধ্যে তিনি মার্টিন ক্রোকে ছাড়িয়ে নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আইসিসি টেস্ট ব্যাটিং র্যাংকিংয়ে এখন কোহলির পরের জায়গাটি তার। দলের অধিনায়ক, সেরা ব্যাটসম্যান, সিনিয়র সদস্য, অধিকন্তু ফিল্ডিংয়ে তিনিই সেরা। ২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড শিরোপা প্রায় ছিনিয়েই নিয়েছিল। তিনি ছিলেন সেই দলের অগ্রভাগের সৈনিক। এবার উইলিয়ামসন দলের অধিনায়ক। কথা কম বলেন, বাগাড়ম্বর একবারই নেই। কিন্তু জেতার আকাঙ্ক্ষায় কোনো কমতি নেই তার।
ফখর জামান (পাকিস্তান)
২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতা পাকিস্তান দলের তারকা ছিলেন ফখর জামান। ওই বিজয়ের পর একদিনের ক্রিকেটে পাকিস্তানের সময় খুব ভালো যাচ্ছে না। ২০১৮ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ২৫ ম্যাচে ২১টিতেই হেরেছে। এবারের বিশ্বকাপের যেকোনো দলের তুলনায় এ দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স খারাপ। কিন্তু বড় টুর্নামেন্টে ঘুরে দাঁড়ানোর অনেক নজির রয়েছে পাকিস্তানের। এজন্য ফখরের ব্যাটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ওডিআই ক্রিকেটে ফখর ও ইমাম-উল হকের উদ্বোধনী জুটি ১২৬৯ রান করেছে। এর বেশি রান করেছে আর মাত্র দুটি ওপেনিং জুটি- ভারতের শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা (১৫৬০) এবং ইংল্যান্ডে জনি বেয়ারস্টো-জেসন রয় (১৩৯৩)।
দিমুথ করুনারত্নে (শ্রীলংকা)
গেল বছর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দিমুথ করুনারত্নের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জেতে শ্রীলংকা। এখন লংকান ক্রিকেটে ভরসা হয়ে উঠেছেন তিনি। সেখানে পরে ওডিআই সিরিজে পাঁচ ম্যাচে হারার পর লাসিথ মালিঙ্গার অধিনায়কত্বের ওপর প্রশ্নচিহ্ন পড়ে। বিকল্প হিসেবে করুনারত্নেকে বেছে নিয়েছে শ্রীলংকা ক্রিকেট বোর্ড (এসএরসি)। তার একটাই সমস্যা- ওডিআই ক্রিকেটে অভিজ্ঞতার ঘাটতি। ২০১৫ সাল থেকে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেননি করুনারত্নে। তবে চমৎকার ব্যাটিং টেকনিক এবং নেতৃত্ব দেয়ার সক্ষমতা প্রমাণ করতে পেরেছেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে তার দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে লংকানদের।
কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দেখার মতো বোলিং অ্যাকশন কাগিসো রাবাদার। অনেকটা দৌড়ে এসে যেভাবে দ্রুতগতিতে বল ছোড়েন তা অতুলনীয়। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক ওয়ানডেতে ঝড় তোলেন তরুণ এ পেসার। ১৫ রান দিয়ে একাই ৬ উইকেট নেন। দ্বিতীয় ওভারে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। এরপর থেকে গেল ক’বছরে হয়ে উঠেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিংয়ের স্তম্ভ। আইপিএলে চোট পেয়ে টুর্নামেন্ট শেষের আগেই দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। তবে ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকার তরফে জানানো হয়েছে, চোট থেকে সেরে উঠেছেন তিনি। রাবাদার ইয়র্কার টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হয়ে দেখা দিতে পারে।
ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
একাই ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা যদি কোনো ক্রিকেটারের থাকে, তিনি ক্রিস গেইল। ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এখন ইউনিভার্স বস, বয়স ৩৯। তবে এখনও যেভাবে অবলীলায় বল মাঠের বাইরে পাঠান তা বিস্ময়কর। গেল ২৩টি ইনিংসে মেরেছেন ১০১টি ছয়। প্রতি ১০ বলে একটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। গেইল যদি ১৫/২০ ওভার ক্রিজে থাকতে পারেন, একাই প্রতিপক্ষকে লণ্ডভণ্ড করার ক্ষমতা রাখেন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
Leave a reply