একের পর এক চমক বের হচ্ছে ভারতের ‘চাওয়ালা’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নতুন মন্ত্রিসভা থেকে। শুক্রবার খবরের কাগজজুড়ে ছিলেন ওড়িশার সহায়-সম্বলহীন অকৃতদ্বার প্রতাপ সারেঙ্গি (৬৪)। দিন ঘুরতে শনিবারই আবার নতুন চমক।
আসামের রামেশ্বর তেলি। মোদি টিম-টু’র নয়া প্রতিমন্ত্রী। বাবা ছিলেন চা শ্রমিক। আসামের ডিব্রুগড়ের চা বাগানেই ভাই, দুই বোন নিয়ে মোট ৬ জনের বাস। বাবার উপার্জনের অর্থে ঠিকমতো খাবারও জুটত না তাদের। তাই খাবারের জোগান করতে এক সময় জঙ্গল থেকে কচু এবং ঢেঁকিশাক তুলে বাজারে বিক্রি করতেন। তাতে যা পেতেন সেটা দিয়েই মিলেমিশে ভাগ করে সকালের খাবার খেতেন। এবার খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আসামের এই রামেশ্বর তেলি এমপিকেই বেছে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। মাত্র ১২ বছর বয়স থেকেই রামেশ্বর নিজের খাবারের অর্থ নিজেই উপার্জন করতে শুরু করেন। ছোট ভাই গুণেশ্বরকে সঙ্গে নিয়ে রোজ আশপাশের জঙ্গল চষে বেড়াতেন। সঙ্গে করে কচু আর ঢেঁকিশাক নিয়ে ফিরতেন। সেগুলোই বিক্রি করে রুটি কেনার অর্থ জোগাড় করতেন। বাবার মৃত্যুর পর তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। মা, ভাই এবং দুই বোনের সংসারের হাল ধরতে হয় রামেশ্বর তেলিকে। তাই পড়াশোনা বিশেষ করে উঠতে পারেননি।
কলেজে পড়ার সময় রামেশ্বর আসামের চা জনগোষ্ঠী ছাত্র সংস্থায় (আটসা) যোগ দেন। আটসা নেতা তেলির জনপ্রিয়তা ও নেতাসুলভ গুণ নজরে পড়ে বিজেপি নেতাদের। ২০০১ সালে দুলিয়াজান থেকে বিজেপি বিধায়ক হন রামেশ্বর। ২০০৬ সালেও বিধায়ক হন। তবে ২০১১ সালে হেরে যান। কিন্তু ২০১৪ সালে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। কংগ্রেসের পাঁচ বারের এমপি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পবনসিংহ ঘাটোয়ারকে এক লাখ ৮৫ হাজার ভোটে হারিয়ে দেন তিনি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পবনসিংহই তার প্রতিপক্ষ ছিলেন। ২০১৪ থেকে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে তাকে ৩,৬৪,৫৬৬ ভোটে হারিয়েছেন রামেশ্বর। রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সংসারের অভাবও আর তেমনটা নেই। তবে রামেশ্বরের জীবনযাপন কিন্তু তেমনটাই রয়েছে। তার মা, ভাই এখনও চা বাগানের সেই দরমার ঘরেই থাকেন। রাজনীতির কাজে বাড়িতে খুব বেশি থাকতে পারেন না রামেশ্বর। বাড়ি ফিরলে কিন্তু এই দরমার ঘরই তার আস্তানা। রামেশ্বরের এক কাকা এখনও ঠেলা চালান। অন্য এক কাকা গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি এলপিজি সিলিন্ডার পৌঁছে দেন। আর এক কাকা অটোচালক। বৃহস্পতিবার ছেলেকে শপথ নিতে দেখে গর্বে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন রামেশ্বরের মা।
Leave a reply