ইংল্যান্ডের মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো সেই ম্যাচই আজ টাইগারদের প্রেরণা

|

ওয়ানডে ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় মাত্র একটি। সেটি ইংল্যান্ডের মাটিতেই। ২০০৫ সালের ১৮ জুন, ভেন্যু- কার্ডিফ। ১৪ বছর পর আবারও সেই জয়ের স্মৃতি টাইগারদের উজ্জীবিত করছে।

দ্বাদশ বিশ্বকাপের লিগপর্বে আজ নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ সেই অস্ট্রেলিয়া। তাই অতীতের সুখস্মৃতি ইংল্যান্ডের মাটিতে অজিদের আবারও হারানোর সাহস দিচ্ছে মাশরাফিদের।

বিশ্বকাপের ২৬তম ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া। নটিংহ্যামে ম্যাচটি শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায়।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ যাবত ২০টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে মাত্র একটি ম্যাচ জিতেছেন টাইগাররা। সেটিও ১৪ বল আগে। কার্ডিফে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল তারা।

টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। বল হাতে নিজেদের বোলিং শুরু করেই অজিদের চেপে ধরেন বাংলাদেশের দুই পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তাপস বৈশ্য। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ওপেনার অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে শূন্য হাতে বিদায় দেন মাশরাফি। আর ইনিংসের ৩২তম বলে অস্ট্রেলিয়ার তখনকার অধিনায়ক রিকি পন্টিংকে আউট করেন তাপস।

এতে দলীয় ৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েন ক্যাঙ্গারুরা। সেই চাপ সামাল দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে লড়াইয়ে ফিরিয়েছিলেন আরেক ওপেনার ম্যাথু হেইডেন, দুই মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান ডেমিয়েন মার্টিন ও মাইকেল ক্লার্ক। হেইডেন ৩৭ রানে থামলেও হাফসেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছেন মার্টিন ও ক্লার্ক। মার্টিন ১১২ বলে ৭৭ ও ক্লার্ক ৮৪ বলে ৫৪ রান করেন।

বাংলাদেশের আঁটসাট বোলিংয়ে ধীরগতির ব্যাটিং করতে বাধ্য হন তারা। তাই অস্ট্রেলিয়ার বড় সংগ্রহের আশা শেষ হয়ে যায় তাদের জুটির রক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ে। তবে শেষ দিকে মাইক হাসির ২১ বলে ৩১ ও সাইমন ক্যাটিচের ২৩ বলে ৩৬ রানের সুবাদে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৪৯ রানের সংগ্রহ পায় পন্টিংয়ের দল।

বাংলাদেশের তাপস ১০ ওভারে ৬৯ রানে ৩ উইকেট নেন। এ ছাড়া মাশরাফি ১০ ওভারে ৩৩ রানে ১ এবং স্পিনার মোহাম্মদ রফিক উইকেটশূন্য থাকলেও ১০ ওভারে দেন ৩১ রান।

২৫০ রানের জয়ের লক্ষ্যে ৭২ রান তুলতে ২ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চিন্তায় পড়ে বাংলাদেশ। তবে দলের চিন্তা দূর করেন মোহাম্মদ আশরাফুল। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন তিনি। তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন তখনকার অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। চতুর্থ উইকেটে দুজনে ১৩৯ বলে ১৩০ রান যোগ করলে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ।

দলীয় ২০২ রানে হাবিবুল ফিরলেও এ ম্যাচেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন আশরাফুল। ব্যক্তিগত সমান ১০০ রানেই থেমে যান অ্যাশ। তার ১০১ বলের ইনিংসে ১১ চার ছিল। ৪৭ দশমিক ১ ওভারে দলীয় ২২৭ রানে দলের পঞ্চম ব্যাটম্যান হিসেবে আউট হন আশরাফুল। ওই সময় জয়ের জন্য ১৭ বলে ২৩ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের।

পরে এই বাকি প্রয়োজনটুকু মিটিয়ে দলকে ৫ উইকেটের অবিস্মরণীয় এক জয়ের স্বাদ দেন আফতাব আহমেদ ও মোহাম্মদ রফিক। ২ চার ও ১ ছক্কায় আফতাব ১৩ বলে ২১ এবং রফিক ২ চারে ৭ বলে ৯ রানে অপরাজিত থাকেন।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওই জয় এখন আত্মবিশ্বাসের রসদ বাংলাদেশের জন্য। বিশ্বকাপের মঞ্চে ৫ খেলায় ৫ পয়েন্ট নিয়ে এখন টেবিলের পঞ্চম স্থানে টাইগাররা। সেমিফাইনালে খেলার পথে ভালোভাবে টিকে থাকতে হলে অজিদের বিপক্ষে জয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমনটি ছিল আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭ উইকেটের জয়। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে জয়ে সেমিতে খেলার পথে ভালোভাবেই টিকে আছে বাংলাদেশ।

টনটনে গত ১৭ জুন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩২১ রান করে উইন্ডিজ। এত বড় টার্গেট পেয়ে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে কখনও জয় পায়নি বাংলাদেশ। তবে সেদিন দলকে এত বড় রান তাড়া করে জয়ের স্বাদ এনে দেন সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস।

৩২২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১৯ ওভারে ১৩৩ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। অর্থাৎ ম্যাচ জয়ের জন্য ৩১ ওভারে হাতে ৭ উইকেট নিয়ে আরও ১৮৯ রান করতে হতো টাইগারদের। কিছুটা শঙ্কিতই হয়তো ছিল বাংলাদেশ শিবির। কিন্তু ২২ গজে বেশ নির্ভার ছিলেন সাকিব। কারণ বিশ্বমঞ্চে ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মেই রয়েছেন সাকিব।

লিটনকে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের লাইন-লেন্থকে তছনছ করে দেন তিনি। তুলে নেন এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। সাকিবের সেঞ্চুরির পর নিজের বিধ্বংসী রূপ দেখান লিটন। তাদের রুদ্রমূর্তিতে ৫১ বল বাকি রেখে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেটে ১৩৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৮৯ রান যোগ করেন তারা।

সাকিব ১৬ চারে ৯৯ বলে ১২৪ এবং লিটন ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৯ বলে ৯৪ রানে অপরাজিত থাকেন। সাকিবের ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি ছিল সেটি। বল হাতেও ২ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। তাই ম্যাচসেরা হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

সাকিব-লিটনের ব্যাটিং নৈপুণ্যে জয়ের ধারায় ফিরে আত্মবিশ্বাসী এখন বাংলাদেশ। তবে সেমিফাইনালের পথে খেলতে হলে পরের ম্যাচগুলোতে আরও ভালো খেলার ইচ্ছা সাকিবের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের পর তেমনটাই জানিয়েছিলেন তিনি।

তাই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও জয়ের জন্য ‘মানসিক দৃঢ়তা’ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের জন্য। অবশ্য দুর্দান্তভাবে এবারের বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করেছিলেন টাইগাররা। কেনিংটন ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে এবারের বিশ্বকাপে পথচলা শুরু হয় তাদের।

তবে পরের তিনটি ম্যাচে হতাশা সঙ্গী হয় বাংলাদেশের। ওভালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে দুর্দান্ত লড়াইয়ের পর ২ উইকেটে হারেন লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই-ই করতে পারেননি তারা।

সাকিবের সেঞ্চুরির পরও ১০৬ রানে ম্যাচ হারে মাশরাফির দল। আর ব্রিস্টলের ভেন্যুতে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয় শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচটি। টানা তিন ম্যাচে জয়বঞ্চিত ছিল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় দিয়ে আবারও জয়ের ধারায় ফিরে আসেন টাইগাররা। ফলে জয়কে সঙ্গী করে এবার অস্ট্রেলিয়াকে চমকে দেয়ার প্রহর গুনছে সাকিব শিবির।

তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় তুলে নিতে দুর্দান্ত ক্রিকেটই খেলতে হবে বাংলাদেশকে। কারণ ৫ খেলায় ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে অস্ট্রেলিয়া। শীর্ষে থাকা ইংল্যান্ডের সঙ্গে তাদের পয়েন্ট সমান। কিন্তু রান রেটে পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে অজিরা।

অস্ট্রেলিয়ার জয়গুলো এসেছে- আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার বিপক্ষে। তবে ভারতের সঙ্গে লড়াইয়ে জিততে পারেননি ডিফেন্ডিং বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। তাই দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষেও জয়ের প্রত্যাশা থাকছে তাদের।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply