জাবি প্রতিনিধি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই হলের ছাত্রলীগ নেতা- কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ও গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। ‘মিষ্টি খাওয়ার সময় ধাক্কা লাগাকে’ কেন্দ্র করে বুধবার দুপুর সোয়া দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বটতলায় মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রায় দুই ঘন্টা পর টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এদিকে, এ ঘটনায় প্রক্টরিয়াল টিমকে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। ঘটনার পর পরই প্রক্টরিয়াল টিমের তিন জন সদস্য উপস্থিত হলেও তারা মারামারি ঠেকাতে ব্যর্থ হন। প্রায় আধা ঘন্টা পর ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান ঘটনাস্থলে আসেন এবং বাকি সদস্যরা পর্যায়ক্রমে ঘটনাস্থলে আসেন। এসময়ও তাদের সামনেই গুলি ছোড়া ও চাপাতি নিয়ে ঘুরতে দেখা যায় ছাত্রলীগ নেতাদের।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ‘পুলিশের পক্ষপাত মূলক আচরণের’ অভিযোগ করে যার যার হলের সামনে অবস্থান নিয়ে ঘটনার সুষ্টু বিচার, ও প্রক্টর এর পদত্যাগ দাবি করছে শিক্ষার্থীরা।
সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল ও ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মেহেদী ইকবাল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক সদস্য আহত হন। এছাড়া উভয় পক্ষের প্রায় ২৫ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে চার জনকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের বিশ্ববিদ্যায়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আহতদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায় নি।
এছাড়া সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত জুবায়ের কামাল নামের এক সাংবাদিক ছাত্রলীগ কর্মীদের মারধরের শিকার হয়েছেন।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানায়, দুপুর দুইটার দিকে বটতলার বেলাল- এর দোকানে মিষ্টি খাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের বাংলা বিভাগের ৪৬ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী আলিফ আফসান দ্বীপ ও নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের দ্বীপ বিশ্বাস। এ সময় সেখানে ভাসানী হলের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪৫ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সৌরভ কাপালি আসলে তার সাথে ধাক্কা লাগে। একপর্যায়ে কাপালি দ্বীপকে চড় মারে। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে উভয় হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রামদা, লোহার রড, পাইপ ও লাঠি নিয়ে বটতলায় আসে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। প্রায় আধা ঘন্টা পর বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগ নেতারা গুলি করতে শুরু করে। প্রায় ১০ থেকে ১২ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করার শব্দ পাওয়া যায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের দর্শন বিভাগের ৪৩ তম আবর্তনের হাবিবুর রহমান লিটন ও শাখা ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও প্রযু্িক্ত বিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল হাসান শাওন সহ কয়েকজন ভাসানী হলের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ যদি সরাসরি জড়িত থাকে বা ইন্ধন দেয় তবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান।’
মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নাজমুল হাসান তালুকদার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ফরিদ আহমেদ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘বটতলায় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে পুলিশ ডাকা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে।’
এসময় দেরিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনা শোনার সাথে সাথেই আমি ঘটনাস্থলে এসেছি। তবে রাস্তা বন্ধ থাকায় আসতে একটু দেরি হয়েছে।
Leave a reply