স্বপ্ন জাগিয়েও জিততে পারেনি আফগানিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩১২ রানের পাহাড় ডিঙাতে নেমে ২ উইকেটে ১৮৯ রান সংগ্রহ করে জয়ের পথেই ছিল আফগানিস্তান। এরপর ৬৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় আসগর আফগান-রশিদ খানরা। শেষ পর্যন্ত ২৩ রানে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে এশিয়ার এই উঠতি দলটি।
এনিয়ে তিন ম্যাচে তীরে গিয়ে তরী ডুবল আফগানদের। এর আগে ভারত ও পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলেও শেষ দিকে খেই হারিয়ে পরাজয়ে মাঠ ছাড়ে আফগানরা।
বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের হ্যাডিংলি লিডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩১২ রানের পাহাড় ডিঙাতে নেমে অসাধারণ ব্যাটিং করেন ইকরাম আলিখিল ও রহমত শাহরা। ইনিংসের শুরুতে স্কোর বোর্ডে ৫ রান জমা করতেই সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব। এরপর রহতম শাহ ও ইকরাম আলিখিলের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে প্রাথমিক ধকল সামলিয়ে খেলায় ফেরে আফগানিস্তান। দ্বিতীয় উইকেটে ১৩৩ রানের জুটি গড়েন তারা।
ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙেন কার্লোস ব্রাথওয়েট। তার বলে ক্রিস গেইলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন রহমত শাহ। তার আগে ৭৮ বলে ১০টি বাউন্ডারিতে ৬২ রান করেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে নজিবুল্লাহ জাদরানের সঙ্গে ৫১ রানের জুটি গড়েন ইকরাম আলিখিল। ৯৩ বলে আটটি চারের সাহায্যে ৮৬ রান করে ক্রিস গেইলের বলে এলবিডব্লিউ হন তিনি।
ইকরামের বিদায়ের পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় আফগানিস্তান। ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন সাবেক অধিনায়ক আসগর আফগান। শেষ দিকে জয়ের জন্য আফগানিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৩৬ বলে ৬৮ রান। হাতে ছিল পাঁচ উইকেট। অনবদ্য ব্যাটিং করে যাওয়া আসগর আফগানের ব্যাটে জয় দেখছিল আফগানরা।
কিন্তু ৪৫তম ওভারে কার্লোস ব্রাথওয়েটের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারিতে জেসন হোল্ডারের অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন আসগর। ৩২ বল ৪টি চার ও এক ছক্কায় ৪০ রান করে আসগর আফগান আউট হলে কঠিন চাপের মধ্যে পড়ে যায় যুদ্ধবিদ্ধস্ত দলটি।
এরপর ২২ রানের ব্যবধানে দৌলত জাদরান ও রশিদ খান আউট হলে ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে যায় আফগানিস্তান। শেষ দিকে সাইদ শারজিদ ১৭ বলে ২৫ রান করে হারের ব্যবধান কমালেও দলের পরাজয় এড়াতে পারেননি। উইন্ডিজের হয়ে ৬৩ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন ব্রাথওয়েট। এছাড়া ১০ ওভারে মাত্র ৩৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন কেমার রোচ।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই উইকেট হারান ক্রিস গেইল। ক্যারিয়ারের শেষ ও বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেও প্রত্যাশিত ব্যাটিং করতে পারেননি তিনি। মাত্র ৭ রানেই ফেরেন ব্যাটিং দানব। দৌলত জাদরানের শিকার হয়ে ফেরেন। দলীয় ২১ রানে গেইলের বিদায়ের পর শাই হোপের সঙ্গে ৮৮ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক ধকল সামাল দেন এভিন লুইস।
বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেয়ার পর রশিদ খানের গুগলির শিকার হন লুইস। মোহাম্মদ নবীর হাতে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে ৭৮ বলে ছয়টি চার ও দুটি ছক্কায় ৫৮ রান করেন তিনি। তার বিদায়ে ২৪.৫ ওভারে ১০৯ রানে দুই ওপেনারের উইকেট হারায় উইন্ডিজ।
এরপর তৃতীয় উইকেটে সিমরন হিতমারের সঙ্গে ৬৫ রানের জুটি গড়েন শাই হোপ। ৩১ বলে তিন চার দুই ছক্কায় ৩৯ রান করে ফেরেন হিতমার। মাত্র ১৮ রানের ব্যবধানে ফেরেন শাই হোপ। তার আগে ৯২ বলে ছয়টি চার ও দুই ছক্কায় ৭৭ রান করেন হোপ।
এরপর পঞ্চম উইকেটে ১০৫ রানের জুটি গড়েন নিকোলাস পুরান ও জেসন হোল্ডার। শেষ দিকে রীতিমতো ব্যাটিং তাণ্ডব চালান হোল্ডার-পুরান। তবে ইনিংস শেষ হওয়ার পাঁচ বল আগে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন নিকোলাস। তার আগে ৪৩ বলে ছয় চার ও এক ছক্কায় ৫৮ রান করেন তিনি। তার বিদায়ের ঠিক পরের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন জেসন হোল্ডার।
সাইদ আহমেদ শিরজাদের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৩৪ বলে এক চার ও চারটি দৃষ্টিনন্দন ছক্কায় ৪৫ রান করেন হোল্ডার। ওভারের শেষ চার বল খেলে দুই চার ও এক ছক্কায় ১৪ রান করেন কালোর্স ব্রাথওয়েট। তার ছোট এবং কার্যকরী ইনিংসে ভর করে ৬ উইকেটে ৩১১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ৩১১/৬ (শাই হোপ ৭৭, নিকোলাস ৬৮, এভিন লুইস ৫৮, জেসন হোল্ডার ৪৫, সিমরন হিতমার ৩৮, ব্রাথওয়েট ১৪*, গেইল ৭, ফ্যাবিয়ান অ্যালান ০*)।
আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ২৮৮/১০ (ইকরাম আলিখিল ৮৬, রহমত শাহ ৬২, আসগর আফগান ৪০, নজিবুল্লাহ ৩১; ব্রাথওয়েট ৪/৬৩, কেমার রোচ ৩/৩৭)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৩ রানে জয়ী।
Leave a reply