ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজে দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান। একাডেমিক ভবনের ছাদ, বিম ও দেয়াল থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা।
অনেক স্থানে বেরিয়ে এসেছে মরীচীকা ধরা লোহার রড। বিভিন্ন স্থানে ধরেছে ভয়াবহ ফাটল। এসব ফাটল ঢেকে দেয়া হচ্ছে। তার ওপর রং করা হয়েছে। এতে এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে যাচ্ছে।
যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ১৯৫৬ সালে বর্তমান ভবনটি চালু করা হলেও আজ পর্যন্ত সংস্কারের মুখ দেখেনি।
সরেজমিন দেখা যায়, ভবনের বেশির ভাগ শ্রেণিকক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ। রোভার স্কাউটের অফিসের সামনের দেয়াল ও বিমে ফাটল ধরেছে। দ্বিতীয়তলায় ওঠার সিঁড়ির ডান পাশের দেয়ালেও ফাটল দেখা দিয়েছে।
১০৬ নম্বর কক্ষের সামনের অংশে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। ০৮ নম্বর কক্ষ ও গ্যালারি ০৫ এর সামনে ছাদের পলেস্তারাও খুলে পড়ছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা কেন্দ্র বন্ধ থাকায় এটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
রোগীর বিছানার মধ্যে পড়ে আছে পলেস্তারা। দেখা যায় ছাদের রড। ভবনের দ্বিতীয়তলায় ওঠার পকেট সিঁড়িতে নেই কোনো বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা। ঘুটঘুটে অন্ধকারে সিঁড়ির দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে।
অনেক ক্লাস রুমে গিয়ে দেখা যায় বসার টেবিলের ওপর পলেস্তারা পড়ে আছে। বিভিন্ন স্থানের দেয়ালে পড়েছে শ্যাওলা।
বাংলা বিভাগের শ্রেণিকক্ষে বসা অবস্থায় ওপর থেকে রং ও পলেস্তারা খসে পড়ছে। বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দেয়াল জরাজীর্ণ। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বারান্দার দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সামনে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। একাডেমিক ভবনের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। গণিত বিভাগের বাইরের দেয়ালে পলেস্তারা খসে পড়ছে।
পুরো ভবন এমন ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও ফাটলের স্তরে জোড়াতালি দিয়ে রং করা হয়েছে। এতে দেখে বোঝার উপায় নেই এটি ঝুঁকিপূর্ণ।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু নোমান রুমি বলেন, আমরা যখন ক্লাস করি তখন প্রায় ছাদের পলেস্তারা খুলে গায়ের ওপর পরে। ক্লাস করার সময় খুব ভয়ে থাকি।
কেননা যেদিকে তাকাই ফাটল আর ফাটল। আমরা জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল আহমেদ বলেন, কলেজের আবাসিক হলে থাকি।
ক্লাস করতে এসেও নিরাপত্তা নেই। আমরা চাই এ ভবন ভেঙে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা হোক। যেখানে আমরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাব। এক গ্রুপ রেখে অন্যগ্রুপের ক্লাস করতে হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ঢাকা কলেজ শিক্ষার দিক দিয়ে অনেকটা এগিয়ে থাকলেও অবকাঠামো দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে আছে।
কেননা প্রত্যেকটি বিভাগে ক্লাস নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত রুম নেই। এক ব্যাচের ক্লাস নেয়ার সময় অন্য ব্যাচ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। এটা কোনো শিক্ষার পরিবেশ হতে পারে না।
যে রুম আছে ভূমিকম্পের কথা মনে হলে প্রচণ্ড ভয় করে। ভবন সংস্কারের প্রতি মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, আমাদের মূল ভবনটা ব্যবহারের অনুপযোগী সেটা ঠিক। সেটা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
আমাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে জুলাইয়ের মধ্যে তাদের প্রকৌশলীরা এসে দেখে যাবেন। বর্তমান ভবনটির ডিজাইন ঠিক রেখে এক সাইড থেকে কাজ করা হলে আমাদের আর ক্লাস রুমের সংকট পড়বে না। আমরা আশাবাদী অতি দ্রুত নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে।
Leave a reply