গত এক দশকের মধ্যে বিশ্বে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এক গবেষণায় বলা হয়, সাংবাদিকরা সরকারি বিধিনিষেধ, সংগঠিত অপরাধ ও ইন্টারনেটের বিকাশের ফলে সৃষ্ট বাণিজ্যিক চাপের কারণে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
জরিপে বলা হয়, এক দশকে তুরস্কে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি কমেছে। এছাড়া বাংলাদেশ, ব্রাজিল, বুরুন্ডি, মিসর, পোল্যান্ড, ভেনিজুয়েলায় সংবাদমাধ্যমের বৈচিত্র্য ও স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
ভ্যারাইটিজ ইন ডেমোক্র্যাসি (ভি-ডেম) প্রকল্পের সঙ্গে যৌথভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘আর্টিকেল ১৯’ গবেষণা শেষে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তারা বিশ্বের ১৭২টি দেশে ২০০৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয়ের আলোকে গবেষণাটি করে।
সংবাদমাধ্যমের পক্ষপাতিত্ব ও দুর্নীতি, ইন্টারনেট সেন্সরশিপ, ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা, সাংবাদিকদের হয়রানি, সামাজিক শ্রেণি ও লিঙ্গের মধ্যে সমতাসহ ৩২টি সামাজিক ও রাজনৈতিক নির্দেশকের উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
আর্টিকেল ১৯-এর নির্বাহী পরিচালক থমাস হুগেজ বলেন, ‘প্রথমবারের মতো আমরা বিশ্বে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্য অধিকারের ব্যাপারে বিস্তারিত ও সঠিক পর্যবেক্ষণ বের করতে পেরেছি। দুর্ভাগ্যবশত গণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক উভয় শাসন ব্যবস্থায়ই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর হামলা হচ্ছে।’
থমাস হুগেজ জানান, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকরা হামলা, মামলা এমনকি হত্যার হুমকির মধ্যে রয়েছে। মেক্সিকোতে ২০১৬ সালেই সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের অফিসে ৪২৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
তিনি দাবি করেন, ‘তদন্ত ক্ষমতা আইন’র মাধ্যমে যুক্তরাজ্য সবচেয়ে কঠিন নজরদারি আইন প্রণয়ন করেছে। একে স্বৈরশাসনের সংকেত এবং নাগরিকদের গোপনীয়তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করে দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
এছাড়া ইন্টারনেটের বিকাশের কারণেও সংবাদমাধ্যমগুলো নতুন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। কারণ ইন্টারনেটে থাকা তথ্যগুলো কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে যাদের ‘স্বচ্ছতার অভাব’ রয়েছে।
গত বছর ২৫৯ জন সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ও ৭৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ফিলিপাইন, মেক্সিকো ও হন্ডুরাসে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও তুরস্কে বিরোধী মতাবলম্বী হওয়ায় সাংবাদিকদের হয়রানি করা হয়েছে। ওই বছরের এপ্রিলে শুধু তুরস্কেই ১৫২ জন সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে।
ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে সহায়তার অভিযোগে সংবাদপত্র, ওয়েবসাইট ও টেলিভিশনসহ ১৭০টির বেশি সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে ২৫ হাজারের বেশি সাংবাদিক বেকার হয়ে পড়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা শতাব্দীর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে আছে। তবে এর মধ্যে আশার কথা হলো, তিউনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ ১১৯টি দেশে তথ্যের স্বাধীনতা বিষয়ক আইন পাস হয়েছে।
Leave a reply