বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার ধাপসুখানগাড়ি গ্রামে ব্র্যাক স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র আশেদুল ইসলাম আশিকের (৮) হত্যারহস্য উন্মোচিত হয়েছে। তাকে নাগর নদে ফেলে হত্যা করেন তার সৎ মা জেমি খাতুন।
সোমবার বিকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন জেমি খাতুন। পরে তাকে বগুড়া জেলহাজতে পাঠানো হয়।
এদিকে পুলিশ অনিচ্ছা সত্বেও জনরোষ থেকে বাঁচাতে রোববার বিকালে জেমিকে থানায় নিয়ে আসে। রাতে শিশুর মা আশিক নূরে আকতার বাদী হয়ে জেমির বিরুদ্ধে মামলা করেন।
সূত্র জানায়, দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের ধাপসুখানগাড়ির মোমিন প্রামাণিক ২০০৮ সালে আশিক নূরে আকতারকে বিয়ে করেন। এ সংসারে আশিকের জন্ম হয়। আশিকের বয়স যখন তিন বছর তখন মাদকাসক্ত মোমিন প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর গ্রামের খায়রুল ইসলামের মেয়ে জেমি খাতুনকে বিয়ে করেন।
এ নিয়ে দাম্পত্য কলহ হলে ৩-৪ বছর আগে তিনি প্রথম স্ত্রী আশিক নূরে আকতারকে তালাক দেন। এরপর আশিক নূরে আকতার তার ছেলে আশিককে সতীনের ঘরে রেখে ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ নেন। আশিক স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়তো।
এদিকে শনিবার সকাল ৭টার দিকে আশিক পারোটা কেনার জন্য থানা বাসস্ট্যান্ডের দিকে হোটেলে যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। দুপুরে বাড়ির কাছে নাগর নদে তার লাশ ভাসতে দেখা যায়।
শিশু আশিককে হত্যার অভিযোগ উঠলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
তাৎক্ষণিকভাবে দুপচাঁচিয়া থানার ওসি মিজানুর রহমান মন্তব্য করেন, শিশু আশিকের মাথায় সমস্যা ছিল। নদীতে পড়ে মারা গেছে।
এদিকে আশিকের মা আশিক নুরে আকতার ঢাকা থেকে ফিরে অভিযোগ করেন, সতীন জেমি খাতুন তার সাজানো সংসার নষ্ট করেছে। এরপর তার একমাত্র সন্তানকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিল।
তিনি আরও জানান, তার সন্তান স্কুলে পড়তো। মাথায় কোনো সমস্যা ছিল না। রোববার বিকালে আশিকের লাশ দাফনের পর বিক্ষুব্ধ জনগণ জেমিকে গ্রেফতারের দাবি জানালে পুলিশ অস্বীকৃতি জানায়। তখন জনগণ জেমির বাড়িতে আগুন ও ভাঙচুরের হুমকি দিলে পুলিশ বাধ্য হয়ে জেমিকে থানায় নিয়ে আসে।
রাতে নিহত শিশুর মা আশিক নূরে আকতার দুপচাঁচিয়া থানায় সতীন জেমির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেন। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শফিকুর রহমান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেমি তার সৎ ছেলে আশিককে নাগর নদে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার করেন। সোমবার বিকালে তাকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিষ্কৃতি হাগিদকের আদালতে হাজির করলে জেমি খাতুন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জেমি আদালতকে জানান, নিজেই সতীনের ছেলে আশিককে নাগর নদে ফেলে হত্যা করেছেন।
এদিকে সতীন জেমি খাতুন আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়ায় শিশু আশিকের মা আশিক নূরে আকতার, তার পরিবার ও গ্রামবাসীদের মাঝে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। সবাই জেমি খাতুনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
Leave a reply