সাবেক রাষ্ট্রপতি, একাদশ সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চতুর্থ ও শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে রংপুরের কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে। লাখো মানুষের অংশগ্রহণে দুপুর আড়াইটায় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে এরশাদের কফিন কালেক্টরেট মাঠে আসার পর পরই পুলিশি বেষ্টনী ভেঙে মরদেহের কাছে ছুটতে থাকেন দলীয় নেতাকর্মীরা। উপচেপড়া ভিড়ের মাঝে শুরু হয় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো। নিজ দলের নেতাকর্মী ছাড়াও আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
রংপুরের মানুষ বরাবরই এরশাদের প্রতি দুর্বল। প্রতিটি নির্বাচনে এরশাদ রংপুর থেকে জয়ী হয়েছেন। সর্বশেষ একাদশ নির্বাচনে রংপুর ৩ (সদর) আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তিনি এ আসন থেকে টানা ছয় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রংপুরকে এরশাদের ঘাটি বলা হয়ে থাকে। আজ একটু পরেই এখানে হবে তার শেষ জানাজা।
দলীয় নেতারা আশা করছেন কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ পল্লীবন্ধুর জানাজায় অংশ নেবেন। এরশাদের জানাজা হবে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জানাজা।
এদিকে রংপুরের পল্লী নিবাসে এরশাদকে দাফন করার সিদ্ধান্তে এখনও অটল রয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে জাতীয় পার্টি ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েকশ নেতা রংপুরে ইতিমধ্যে রংপুরে এসে পৌঁছেছেন। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগ থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ জানাজায় শরিক হবেন।
এদিকে এরশাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রংপুর জেলা দোকান মালিক সমিতি নগরীর সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট দুপুর ২টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সকাল থেকে নগরীর সব দোকান বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
এদিকে এরশাদের মরদেহ রংপুরের কালেক্টরেট মাঠে আনা হয়ে। রংপুর ক্যান্টনমেন্টে থেকে মরদেহবাহী গাড়ি কালেক্টরেট মাঠে পৌঁছায় মঙ্গলবার ১২টা ১৫ মিনিটে।
এর আগে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে বিমানবাহিনীর একটি সাদা হেলিকপ্টারযোগে এরশাদের লাশ ঢাকা থেকে আনা হয় রংপুর ক্যান্টনমেন্টে।
ক্যান্টনমেন্ট থেকে চতুর্থ জানাজার জন্য লাশ আনা হয় কালেক্টরেট মাঠে। এখানেই বাদ জোহর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন এরশাদের জানাজায় ইমামতি করবেন রংপুর করিমিয়া নুরুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম আলহাজ মাওলানা মুহম্মদ ইদ্রিস আলী।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর থেকে এরশাদের মরদেহবাহী হেলিকপ্টার রংপুরের উদ্দেশে রওনা হয়।
এরশাদের কফিনের সঙ্গে যান তার ছোট ভাই ও জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের, এরশাদের ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, আজম খান, এটিইউ তাজ রহমান ও শফিকুল ইসলাম সেন্টু।
রংপুর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বলছেন এরশাদের অন্তিম চাওয়া ছিল তাকে রংপুরেই দাফন করা হোক। সে জন্য পল্লী নিবাসের লিচুতলায় কবর খনন করা হয়েছে। রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, জানাজা শেষে স্যারের (এরশাদ) মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে পল্লী নিবাসে। সেখানে লিচুতলায় তাকে দাফন করা হবে। এ জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
রংপুরের মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ঘোষণা দিয়েছেন, তারা ‘যেকোনো মূল্যে’ এরশাদের মরদেহ রংপুরে রেখে দেবেন। এরশাদকে রংপুরেই দাফন করা হবে।
প্রসঙ্গত রোববার সকাল পৌনে ৮টায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন মৃত্যুবরণ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি রক্তে সংক্রমণসহ লিভার জটিলতায় ভুগছিলেন। রোববার বাদ জোহর ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদে দ্বিতীয় এবং বাদ আসর বায়তুল মোকাররম মসজিদে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রংপুরে চতুর্থ জানাজা শেষে আজ তাকে দাফন করা হবে। এরশাদের ভাই জিএম কাদের জানিয়েছেন, রংপুরে নয়, এরশাদের দাফন হবে ঢাকাতেই।
Leave a reply