বাংলাদেশে রাইডারদের জন্য গুগল ম্যাপে বেশ কয়েকটি নতুন ফিচার চালু করেছে বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল। মঙ্গলবার রাজধানী গুলশানের লেকশোর হোটেলে এক অনুষ্ঠানে নতুন এ ফিচারগুলো উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি ডিভিশনের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গুগল ম্যাপসের ডিরেক্টর প্রডাক্ট ম্যানেজমেন্ট ক্রিশ ভিতালদেভারা; গুগল ম্যাপসের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার (দক্ষিণ এশিয়া) অনল ঘোষ; গুগলের বিজনেস অ্যান্ড অপারেশন্স লিড বিকি রাসেল এবং গুগলের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অপারেশন্স জেসিকা বায়ার্ন।
অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমরা ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ ও এই খাতে ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি অর্জনের ফলে বিশ্বজুড়েই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে পথিকৃৎ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে বাংলাদেশকে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশে উপযুক্ত ইকোসিস্টেম তৈরিতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ সরকার। এর ফলস্বরূপ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশীয় ও বিদেশী বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের লক্ষ লক্ষ নাগরিক বর্তমানে গন্তব্য খুঁজে বের করতে, পথনির্দেশনা পেতে এবং যানজট এড়াতে বেছে নিচ্ছেন গুগল ম্যাপসের মতো পরিষেবা, যা ইতোমধ্যেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পলক বলেন, বাংলাদেশের মানচিত্রায়নে গুগলের নিরলস প্রচেষ্টাকে আমি সাধুবাদ জানাই। আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় ভয়েস ন্যাভিগেশন সেবা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংযুক্ত করা এবং দেশের রাইড শেয়ারিং খাতের উন্নয়নে গুগল ম্যাপে বিশেষ মোটরসাইকেল মোড সংযুক্ত করার ফলে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার সুফল পৌঁছে যাচ্ছে আর্থসামাজিক অবস্থান ভেদে সকলের হাতে হাতে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম বিভিন্ন পরিষেবা উদ্ভাবনে সরকার ও গুগল একত্রে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
এখন থেকে রাইডাররা শুধুমাত্র যাত্রার আনুমানিক সময়সীমাই জানতে পারবেন না, বাইকের জন্য সবচেয়ে ভালো পথ নির্দেশিকাও পাবেন। এছাড়া গুগল ম্যাপস ব্যবহারকারীরা বাংলায় ভয়েস ন্যাভিগেশন বা পথনির্দেশিকা শুনতে পারবেন।
যেহেতু রাইড শেয়ারিং এখন বেশ জনপ্রিয়, আর তাই প্রত্যেক যাত্রী নিজেদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে কোন পথটি সবচেয়ে ভালো তা ডাবল-চেকিংয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারবেন এবং তা পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন। নির্বাচিত রুট বা পথ থেকে ০.৫ কিলোমিটার পরিমাণ বাইরে গেলেই যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য রয়েছে অডিয়েবল অ্যালার্ট।
এ বিষয়ে গুগল ম্যাপসের ডিরেক্টর প্রডাক্ট ম্যানেজমেন্ট ক্রিশ ভিতালদেভারা বলেন, চাহিদা অনুযায়ী আমরা স্থানীয় জনসাধারণকে সর্বোৎকৃষ্ট অভিজ্ঞতা প্রদানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আর তাই বাংলা ভয়েস ন্যাভিগেশন এবং উপযুক্ত পথ দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো ও তা শেয়ার করার ফিচার কমিউটার সেফটির মতো সংশ্লিষ্ট সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। এতে করে বাংলাদেশের সর্বত্র যাত্রীদের পথ যাত্রা হবে আরও সহজতর।
মোটরসাইকেল রাইডারদের জন্য গুগল ম্যাপস নিয়ে এসেছে নতুন ন্যাভিগেশন মোড। মোটরসাইকেল রাইডারদেরও রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট চাহিদা। গাড়ি যেসব পথ দিয়ে চলাচল করতে পারে না, গুগল ম্যাপসের নতুন ফিচারের মাধ্যমে সেসব সরু পথ দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন মোটরসাইকেল রাইডাররা।
এছাড়া এমন অনেক রাস্তা বা হাইওয়ে আছে যেগুলোতে দুই চাকা বিশিষ্ট যানবাহন চলাচল নিষেধ, কারণ সেসব রাস্তায় গাড়ি ও মোটরসাইকেলের গতির পার্থক্য অনেক। এসব রাস্তায় না যাওয়ার জন্যও নির্দেশনা দেবে গুগল ম্যাপস।
আগে পায়ে হাঁটা ও গাড়ি ড্রাইভিংয়ের মিলিত সম্ভাব্য সময় ধরে নিয়ে মোটরসাইকেল রাইডাররা গন্তব্যে পৌঁছানোর আনুমানিক সময় হিসেব করতেন। কিন্তু এখন গুগল ম্যাপের নতুন মেশিন লার্নিং ফিচারের মাধ্যমে মোটরসাইকেল রাইডারদের যাত্রার সময় হবে আরও নির্ভুল, যার কার্যকরী প্রভাব পড়বে মোটরসাইকেলের গতি ও রুটের ওপর।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা গুগল ম্যাপসের নতুন সংস্করণটি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে নতুন সব ফিচার উপভোগ করতে পারবেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে গুগল ম্যাপস।
Leave a reply