একের পর এক পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার জেরে অবরোধের পর অবরোধে জর্জরিত উত্তর কোরিয়া। সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর উত্তর কোরিয়ার ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবশ্য, অবরোধের অভিজ্ঞতা উত্তর কোরিয়ার জন্য এই প্রথম নয়। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের নানা ধরনের অবরোধের চাপ সামলে আসছে দেশটি। প্রশ্ন জাগতে পারে, জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রের গাদা গাদা নিষেধাজ্ঞার পর উত্তর কোরিয়ায় অবরোধ আরোপের আর কোন কোন ক্ষেত্র বাকী আছে? এ প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সিএনএন। এখনো অবরোধের আওতায় পড়েনি, সাকল্যে এমন ৩টি মাত্র খাত খুঁজে পেয়েছে তারা ।
প্রথমটি হলো, উত্তর কোরিয়ায় চীনা ব্যাংকিং। এই ব্যাংকগুলোর মাধ্যমেই আর্থিক লেনদেন সচল রাখতে পারছে দেশটি। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া পাশ কাটিয়ে টিকে আছে।
ফাউন্ডেশন ফর দ্য ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসি’র জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি রগিয়েরো দিন কয়েক আগে, চীনা ব্যাংকগুলোকে চাপে ফেলার কৌশল বাতলে দিয়েছেন তাঁর এক লেখায়। আমেরিকার আর্থিক খাতে ওইসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া কিংবা সেদেশে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করলেই কাজ হবে বলে মনে করেন তিনি। এতে, নিজেদের বাঁচাতে তারা উত্তর কোরিয়া থেকে সরে আসতে বাধ্য হবে। ইরানের ওপর গেল কয়েক বছর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে, ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোকে বিধিনিষেধে আটকে দেয়ার উদাহরণও টানেন তিনি।
সিএনএন’র বিচারে দ্বিতীয় খাত, যেটিতে অবরোধ আরোপ করা যায়, তেল সরবরাহ খাত। উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতির জন্য যেমন, তেমনি সেনাবাহিনীর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ এই খাত। এর পুরোটাই আসে বিদেশ থেকে যার বড় অংশ পাঠায় চীন।
চীন অবশ্য এই প্রতিবেশীকে তেল সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু, একেবারে বন্ধ করতে আগ্রহী নয় তারা। তাছাড়া, তারা কিম জং উনের দেশকে আদতে কী পরিমাণ জ্বালানি রফতানি করছে, তার কোন পরিসংখ্যান প্রকাশ করে না।
দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির ওই ঘোষণা নিয়ে তাই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের কপালেও চিন্তার ভাঁজ। পুরোপুরি বন্ধ না করলেও উত্তর কোরিয়ায় তেল রফতানি কমিয়ে, কথা রাখতে চীনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
এর বাইরে আর বাকি আছে, জাহাজ ব্যবসা। গেল নভেম্বরের শুরুর দিকে উত্তর কোরিয়ার জাহাজ কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তার আগে, জাতিসংঘও ওই নৌযানগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিলো।
এসবে লাভ হয়নি তেমন। নাম, দেশের নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর কিংবা পতাকা পাল্টে উত্তর কোরীয় জাহাজ ঠিকই চলাচল করছে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায়। কোনো কোনোটি ‘অফশোর’ কোম্পানির নামের রেজিস্ট্রি করা। ধরা পড়ার হাত থেকে বাঁচতে গন্তব্য হিসেবে অন্য কোনো স্থানের নাম ঠিক করা থাকে। ফলে, নিষেধাজ্ঞা দিলেও এই খাতটিকে বাগে আনা সহজ হবে না।
ট্রাম্পের তর্জন-গর্জন টুইটেই সীমাবদ্ধ না থাকলে হয়তো উপরের যেকোনো একটিতে অবরোধ আসতে পারে। তবে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে সংশয় আছে বিশ্লেষকদের। কিছু উচ্চবাচ্য’র ঘটনা বাদ দিলে চীনের আশীর্বাদের হাত যে এখনো উত্তর কোরিয়ার ওপর বহাল।
যমুনা অনলাইন: এসএস/টিএফ
Leave a reply