ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে সুষ্মিতা দেবনাথ অদিতি বিয়ে করেন হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলে তুষারকে। তুষার নিচু জাতের হওয়ায় বিয়ে মেনে নেন না সুষ্মিতার পরিবার। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও অপহরণের মামলা করেন অদিতির মা। সেই মামলায় ১৪ বছরের কারাদণ্ডও হয় তুষারের। কিন্তু বর্ণ প্রথাকে পায়ে ঠেলে মনের জোরে ভালোবাসাকে জয় করে তুষার-সুষ্মিতার প্রেম নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। জামিন পেয়ে আজ কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্ত পান তুষার। এই দম্পতির ৯৫ দিনের একটি কন্যা সন্তান আছে।
কারামুক্তির পর তুষার সাংবাদিকদের বলেন, আমি খুশি। আমার স্ত্রী আইনি লড়াই করে আমাকে মুক্ত করেছে। আমাদের ভালোবাসার জয় হয়েছে। আমার ভালোবাসা আজ সার্থক।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর আদালত শুনানি শেষে তুষারকে কারাগারে ও অদিতিকে সেফহোমে পাঠানোর আদেশ দেন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর অভিযোগ দাখিল করে মামলাটি কিশোর অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। বয়স নির্ধারণ করে মেডিকেল অফিসারের সনদে বলা হয়, অদিতির বয়স ১৮ থেকে ১৯ বছর। যদিও এসএসসি পরীক্ষার নিবন্ধন অনুযায়ী অদিতির বয়স ১৫ বছর। মেডিকেল সনদ পাওয়ার পর আদালত ২০১৮ সালের ২৪ জুন এক আদেশে তুষারকে জামিন ও অদিতিকে নিজ জিম্মায় পাঠায় আদালত। মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
কিন্তু মামলার বাদী অদিতির মা পারুল দেবনাথ কিশোর আদালতের ২৪ জুনের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন।
হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট কিশোর আদালতের আদেশ স্থগিত করেন। অন্যদিকে তুষার হাইকোর্টের ওই আদেশ সংশোধনের জন্য আবেদন করেন। এরপর ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর তুষারকে জামিন এবং অদিতিকে নিজ জিম্মায় থাকার আদেশ দেন হাইকোর্ট।
এরপর হাইকোর্ট চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি অদিতির বয়স নির্ধারণ করতে শরীয়তপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশ দেন। কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আ. ছালাম খান বয়স নির্ধারণ না করেই আসামির বিরুদ্ধে গত ১০ এপ্রিল অভিযোগ গঠন করেন।
এরপর গত ২৩ জুলাই একদিনে সাতজন সাক্ষী ও আসামির জবানবন্দি গ্রহণ করেন। সেদিনই দুপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষ করেন। ওই দিনই কিছুক্ষণের মধ্যে তুষারকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেন। এ রায়ের পর তুষারকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তুষার কারাগারে ছিলেন। এ অবস্থায় সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল ও জামিন আবেদন করা হয়। ১ আগস্ট জামিন পান তুষার।
দীর্ঘ আইনি লড়াই করে স্বামীকে জামিনে মুক্ত করার পর অদিতি বলেন, আমি খুব খুশি। ছোট্ট মেয়েটা ওর বাবাকে কাছে পাবে। ভালোবেসে স্বেচ্ছায় তুষারকে বিয়ে করেছি। আমি মনে করি ভালোবাসায় কোনো উঁচু-নিচু বা বর্ণ বিষয় নেই।
Leave a reply