নগরীর মোহাম্মদপুরের কলেজগেট এলাকায় ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করছেন না পথচারীরা। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
গত বছরের ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হয়। এরপরই নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশে শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে আন্দোলন শুরু করে।
এ আন্দোলন বেশ কিছুদিন চললে সবাই ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারসহ ট্রাফিক আইন মানতে শুরু করলেও কার্যত সেটা স্থায়ী হয়নি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ট্রাফিক সপ্তাহ পালন ও ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে সচেতনতামূলক সেমিনারের আয়োজন করে পথচারীদের ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে আগ্রহী করার চেষ্টা করেও তেমন কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
মহাসড়কের সড়ক বিভাজকের দু’পাশ দিয়েই যাত্রীবাহী বাস, পণ্য আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহৃত পিকআপ ও লরি দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে। পাশেই পথচারীদের সড়কের এপার থেকে ওপারে পারাপারের জন্য ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
কিন্তু সামান্য সময় বাঁচানোর জন্য সড়কের বিভাজকের ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছে পথচারীরা। একটু অসাবধানতায় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
কিন্তু তাতেও ভ্রূক্ষেপ নেই পথচারীদের। আছে ফুটওভারব্রিজ, তবুও ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষ সড়ক পারাপার হচ্ছে। এ নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করার জন্য বিভিন্ন সময় সভা সেমিনার করলেও সচেতন হচ্ছে না সাধারণ মানুষ।
প্রতিনিয়ত এ সড়ক দিয়ে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। কলেজগেট এলাকায় সরকারি বেশ কয়েকটি হাসপাতাল রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে। চিকিৎসা নিতে আসা সিংহভাগ পথচারী ব্যবহার করছে না ফুটওভারব্রিজ।
চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাহমিদা হক লাবণ্য হৃদরোগ হাসপাতালের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তিনি ছিলেন রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেলে। হঠাৎ এক পথচারী দৌড় দিলে মোটরসাইকেলটি ব্রেক করা হয়।
এ সময় পেছন দিক থেকে আসা পিকআপ ভ্যান ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান লাবণ্য। প্রায়ই এ সড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। তাতেও কোনোভাবে তারা ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করছে না।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ফাতেমা বেগম। তার কোলে রয়েছে ২ বছরের ছেলে। তিনি বলেন, আমি ঢাকা শহরে নতুন এসেছি, শহরের কোনো কিছুই আমি ভালো বুঝি না।
অনেককে দেখলাম তারা সবাই এভাবে সড়ক পারাপার হচ্ছে, এজন্য আমিও হলাম। দ্রুতগতিতে চলা এ সড়কে পার হওয়ার সময় আপনার বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যখন রাস্তা পার হলাম তখন আমার বুকের ভেতর কাঁপছিল। এ বুঝি গাড়ি আমাকে চাপা দেয়। আমার কষ্ট হলেও এরপর থেকে ফুটওভারব্রিজ দিয়ে পার হব।
সড়ক দিয়ে পার হওয়ার সময় আরও কয়েকজন পথচারীর সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, ওষুধ কিনতে আমাদের হাসপাতাল থেকে রাস্তা পারাপার হতে হয়। অনেক সময় রোগীর খারাপ অবস্থা হলে মাথা ঠিক থাকে না। দ্রুত ওষুধ আনতে সড়ক পার হতে হয়। তবে এভাবে সড়ক পার হওয়া ঠিক না।
ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার কেএম শহীদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, প্রথমত সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। এটা সব সময় সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না।
সামান্য সময় বাঁচাতে আপনার জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন। আমরা ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করার জন্য সভা, সেমিনার, লিফলেট বিতরণ করছি। স্কুলে স্কুলে যেয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছি।
ফুটওভারব্রিজের সব ফেস্টুন অপসারণ করা হয়েছে। যাতে কেউ কোনো অপকর্ম না করতে পারে। সবাইকে বলব সরকার আপনাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করেছে। আপনারা ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করুন।
সূত্র: যুগান্তর
Leave a reply