কোনোভাবেই যেন স্থির হতে পারছে না বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের অন্যতম কালজয়ী ব্যান্ড এলআরবি। এক বছরেরও কম সময়ে শ্রোতাপ্রিয় এই ব্যান্ড ভেঙেছে তিনবার। গেল বছরের অক্টোবরে আইয়ুব বাচ্চুর মারা যাওয়ার কিছু দিন পর থেকেই এলআরবির সদস্যদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুঁড়ি শুরু হয়, যা এখনও চলছে। এতে চরম হতাশ এলআরবি ভক্তরা।
আইয়ুব বাচ্চু মারা যাওয়ার পরেই এলআরবির ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন ভক্তরা। কিছুদিন পরে বালামকে ভোকাল করে নতুন লাইনআপ ঘোষণা দেয় এলআরবি। কয়েকদিন যেতে না যেতেই দ্বন্দ্ব শুরু হয় সদস্যদের মধ্যে। আলাদা হয়ে যান সদস্যরা। সাইদুল হাসান স্বপন, আর গোলামুর রহমান রোমেল একদিকে, আর অন্যদিকে চলে যান মাসুদ ও ম্যানেজার শামীম। আলাদা হয়ে যাওয়ার রেশ কাটতে না কাটতে এবার রোমেল ও স্বপনের মধ্যেই লেগেছে দ্বন্দ্ব! যার ফলে রোমেলকে বাদ দিয়ে নিজেই নতুন করে এলআরবির লাইনআপ ঘোষণা করেছেন স্বপন। নতুন ভোকাল হিসেবে নিয়েছেন ব্যান্ড তারকা মিজানকে। যে মিজান কিছুদিন আগেই ‘মহাকাব্য’ নামে একটি ব্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মিজান ছাড়া স্বপনের (ব্যান্ড লিডার ও বেজ) এই লাইনআপে আছেন- পুষ্প ফেরদৌস (গিটার) ও অমিত (ড্রামস)।
এই লাইনআপ নিয়ে এলআরবির গানের অনুশীলনের ভিডিও দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যেখানে মিজানকে ‘চাঁদমামা’, ‘ঘুমন্ত শহরে’ ইত্যাদি গান গাইতে শোনা গেছে, দেখা গেছে অনুশীলনের ভিডিও চিত্র। সাইদুল হাসান স্বপন গণমাধ্যমকে জানান, এলআরবির সদস্য মাসুদ ও শামীম ভাইয়ের অপেক্ষায় আছি। তাদের জায়গায় কাউকে নিইনি। তারা এলে আগের মতোই আমরা শুরু করবো। তবে দলের সাবেক সদস্য শামীমের বক্তব্য তাকে ‘অসম্মানজনকভাবে’ বাদ দেয়া হয়েছিল।
এদিকে, নতুন লাইনআপের ঘোষণা দিয়ে সাইদুল হাসান স্বপন দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমি সাইদুল হাসান স্বপন (এলআরবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য), আমার ব্যান্ডের নতুন লাইনআপ ঘোষণা করেছি। কেন এই পরিবর্তন, সেটা জানার অধিকার এলআরবি ভক্তদের আছে। একটু পিছনে ফিরে যাই; ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল আইয়ুব বাচ্চু, স্বপন, জয়, টুটুল মিলে এলআরবি ব্যান্ডটি যাত্রা শুরু করে। আপনারা হয়তো অনেকে জানেন না আমার গিটার শেখা শুরু বসের হাতেই ১৯৮৪ সালের অক্টোবর মাসে। তারপর থেকে তার মৃত্যু পর্যন্ত তার পাশেই ছিলাম (৩৪ বছর)।’
স্বপন আরও লেখেন, ‘জয় চলে যাবার পর ড্রামার হিসেবে আমাদের সাথে কাজ করেছেন মিল্টন আকবর, সুমন, রিয়াদ। সর্বশেষ লাইনআপ ছিলো, আইয়ুব বাচ্চু, স্বপন, মাসুদ, রোমেল এবং ম্যানেজার হিসেবে শামীম। বাচ্চু ভাইয়ের আকস্মিক মৃত্যুর পর ব্যান্ড চলমান রাখার জন্য নানা সিদ্ধান্তে মতভেদ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ না থাকা, সবাই ব্যান্ড লিডার হতে চাওয়া; এভাবেই দ্বন্দের শুরু। এক পর্যায়ে রোমেল আমাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যায় মনোমালিন্যের কারণে। কিন্ত কেন আমি সরে আসলাম? তা কখনোই (আজ পর্যন্ত) শামীম, মাসুদ আমার সাথে যোগাযোগ করে জানতে চায়নি!’
রোমেল কেনো নেই? এর উত্তরও দিয়েছেন স্বপন, ‘এলআরবি ভাঙার অন্যতম কারিগর রোমেল। বাচ্চু ভাই মারা যাবার পর ব্যান্ড চালু রাখার স্বার্থে প্রতিটা সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে রোমেল। এছাড়া বিভিন্ন সময় টাকা নিয়ে যে কাউকে এলআরবিতে গান গাওয়ার সুযোগ দেবার কথা বলা, বাচচু ভাই এবং এলআরবির সম্মান রক্ষার্থে, এসব কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় আমার সাথে রোমেলের খারাপ আচরন করা, এবং বলা যে, সে আমার কোন সিদ্ধান্ত মানবে না এবং এলআরবি করতে হলে আমাকে তার সিদ্ধান্ত মানতে হবে।
কিছু দিন আগে আমার নজরে আসে ‘কনসার্ট ফর নিলুফার’ নামে একটি শোতে এলআরবির নাম। যার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। রোমেল বা আয়োজকরা আমার সাথে কোনোরকম যোগাযোগ করার প্রয়োজন মনে করেনি। আমি নিজে আয়োজকদের সাথে যোগাযোগ করার পর রোমেল আমাকে ফোন করে আবারও অভদ্র আচরণ করে। আমি আয়োজকদের এলআরবির পারফর্ম করার বিষয়ে অপরাগতা জানানোর পরও তারা এলআরবির নাম তুলে নেয়নি।
সব চাইতে শেষ যে ভয়ংকর ঘটনা সে ঘটিয়েছে, আইয়ুব বাচ্চু ও এলআরবির গানের ভিডিও কন্টেন্ট কোনোরকম অনুমতি(এলআরবি ও বাচ্চু ভাইয়ের পরিবার) ছাড়া বিদেশে গোপনে নিজের নামে একাউন্ট খুলে বিপুল পরিমান ডলার আত্মসাৎ করেছে, যা এখনও চলমান। এই চরম বিশ্বাসঘাতকতার কারণে আমি সাইদুল হাসান স্বপন (এলআরবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য) রোমেলকে এলআরবি থেকে অপসারণ করতে বাধ্য হচ্ছি। আমি জানি বস বেঁচে থাকলে এটাই করতেন। সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, যে রোমেল আর কোনোভাবেই এলআরবির সাথে সম্পৃক্ত নয়। আমার অনুমতি ছাড়া কেউ এলআরবি নাম ব্যবহার করবেন না।’
স্বভাবতই, এলআরবির এমন অস্থিরতা চরমভাবে হতাশ করছে ভক্তদের। আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর ব্যান্ডটির সদস্যদের কাদা ছোড়াছুড়ির ফলে ব্যান্ড মিউজিকের কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুকেই অপমান করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
Leave a reply