১৪৬ রানে ৮ উইকেট খুইয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে কতদূর যান স্বাগতিকরা, সেটাই ছিল দেখার বিষয়। শেষদিকে দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মোসাদ্দেক হোসেন ও তাইজুল ইসলাম। দলের নির্ভরশীল ব্যাটসম্যানরা যা করতে পারেননি তা-ই করে দেখান তারা। নিখুঁত ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় দিনের বাকি সময় নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন এই জুটি।
ফলে লজ্জার হাত থেকে রক্ষা পান টাইগাররা। দিন শেষে ৮ উইকেটেই ১৯৪ রানের সংগ্রহ পেয়েছেন তারা। টেস্ট ক্রিকেটের নবীনতম দলটির সংগ্রহের অর্ধেকের মধ্যে অলআউটের লজ্জায় পড়তে হয়নি তাদের। মুখরক্ষা করা মোসাদ্দেক আছেন ফিফটির দোরগোড়ায়। তিনি ৪৪ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন। ১৪ রান নিয়ে ক্রিজে আছেন তাইজুল। ইতিমধ্যে ৪৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ফেলেছেন তারা। তৃতীয় দিনের গোড়াপত্তন করবেন এই দুজন।
চট্টগ্রাম টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। দলীয় স্কোর বোর্ডে কোনো রান জমা না হওয়ার আগেই ফেরেন সাদমান ইসলাম। প্রথম ওভারেই তাকে তুলে নেন ইয়ামিন আহমেদজাই। এই ওপেনারকে উইকেটের পেছনে আফসার জাজাইয়ের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তিনি। রানের খাতায় খুলতেই পারেননি সাদমান। এ অবস্থায় অস্বস্তি নিয়ে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ।
মধ্যাহ্নভোজ থেকে ফিরে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন লিটন দাস। তবে তাকে যথার্থ সঙ্গ দিতে পারেননি অপর ওপেনার সৌম্য সরকার। দলীয় ৩৮ রানে মোহাম্মদ নবীর এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি। তাতে ভাঙে স্বাগতিকদের প্রাথমিক প্রতিরোধ।
ওয়ানডাউনে নামার কথা ছিল মুমিনুল হকের। তবে দ্রুত উইকেট হারানোয় ব্যাটিংঅর্ডারে পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। তার জায়গায় ব্যাট করতে নামেন লিটন দাস। দারুণ খেলছিলেন তিনি। বলের গুণাগুণ বজায় রেখে ব্যাট চালাচ্ছিলেন এই টপঅর্ডার। তবে সেটা ভালোভাবে নেননি সফরকারী অধিনায়ক রশিদ খান। সাধারণ এক বলে সোজা বোল্ড করে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে লিটনের প্রতিরোধ ভাঙেন তিনি। ফেরার আগে করেন ৩৩ রান।
পরে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কিছুক্ষণ পরই রশিদ খানের এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন সাকিব আল হাসান। সেই ওভারেই তার বলে কট বিহাইন্ড হন মুশফিকুর রহিম। এর রেশ না ফুরাতেই যাওয়া-আসার মিছিলে যোগ দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাকে সরাসরি বোল্ড করে দেন আফগান অধিনায়ক। ফলে মহূর্তেই মহাবিপর্যয়ে পড়েন স্বাগতিকরা।
এই পরিস্থিতিতেও কেউ থিতু হতে পারেননি। তবে লড়াই চালিয়ে যান মুমিনুল হক। সেই ধ্বংস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে লড়ে ফিফটি হাঁকান তিনি। তবে ক্যারিয়ারে ১৩তম ফিফটি তুলে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি পয়েট অব ডায়নামো। ব্যক্তিগত স্কোরে আর ২ রান যোগ করেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। তাকে ফেরান মোহাম্মদ নবী। পরক্ষণেই স্বাগতিক শিবিরে ছোবল মারেন কায়েস আহমেদ। তিনি বিদায় করেন মিরাজকে। এটিই তার অভিষেক টেস্ট উইকেট।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ৩৪২ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে আফগানিস্তান। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমে স্বপ্নের মতো ব্যাটিং করে তারা। টেস্টে এক ইনিংসে তোলে দলীয় সর্বোচ্চ রান। এর আগে টেস্ট ইতিহাসে আফগানিস্তানের দলগত সর্বোচ্চ রান ছিল ৩১৪ রান। চলতি বছরের মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দেরাদুন টেস্টে এই রান করে তারা।
আফগানিস্তানের হয়ে ১০২ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেন রহমত শাহ। আফগানদের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে রেকর্ডের পাতায় নাম লেখান তিনি। ৯২ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন আসগর আফগান। অধিনায়ক রশিদ খান ফেরেন ৫১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে। এছাড়া উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান আফসার জাজাই করেন নান্দনিক ৪১ রান।
বাংলাদেশের হয়ে তাইজুল ইসলাম শিকার করেন সর্বোচ্চ ৪ উইকেট। ২টি করে উইকেট দখল করেন সাকিব আল হাসান ও নাঈম হাসান। এছাড়া মেহেদি হাসান মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১টি করে উইকেট নেন।
Leave a reply