রাজধানীর বাংলামোটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সপ্তম তলায় বাতিঘরে সোমবার সকালে এক আড্ডায় অংশ নেন যাও পাখি, মানবজমিন, দুরবিন, পারাপার ও পার্থিবসহ অনেক জনপ্রিয় উপন্যাসের লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।
আড্ডার শুরুতেই তিনি বলেন, বাংলাদেশ ওনার জন্মভূমি, এখানে এলে নিজের দেশের অনুভূতি হয়। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন খুব দূরন্ত। দেশভাগের সময় তিনি পরিবার থেকেও দূরে সরে যান। তখন থেকেই নিজের একটা পরিচয় তৈরির তাগিদ অনুভব করেন।
এই লেখক আরও জানান, যেহেতু খেলা আর পড়া ছাড়া অন্য কিছু পারতেন না তাই লেখাটাকেই বেছে নেন। এরপর দেশ ম্যাগাজিনে তার লেখা ছাপা হবার পর সেখোনে নিয়মিত লেখা শুরু করেন।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশে পশ্চিমবঙ্গের থেকে পাঠক ৫-৭ গুন বেশি। তবে আফসোসের বিষয় এখানে পাইরেসির কারণে রয়ালিটির যোগ্য সম্মান পাওয়া যায় না।
তিনি আরও জানান, সাধারণ থাকতে পছন্দ করেন। অনেকেই তাকে দেখে জিজ্ঞেস করেন তিনিই শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় কি না।
লেখা নিয়ে শীর্ষেন্দু জানান, তিনি কখনো প্লট ভেবে লেখেন না। চরিত্ররাই তাকে লিখিয়ে নেয়। তার লেখা বইয়ের চরিত্র বা বই নিয়ে অনেক সিনেমাও হয়েছে যেমন শবর বা গয়নার বাক্স- সেগুলো তার মোটামুটি লেগেছে।
বাতিঘরের কর্ণধার দীপঙ্কর দাশের সঞ্চালনায় আড্ডায় শীর্ষেন্দু বলেন, “আমি লিখবো, পাঠক সেটা নেবে কী নেবে না, তা পাঠকের বিষয়। লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নেওয়াটা বিপজ্জনক।”
বাংলাদেশের কাদের লেখা ভালো লাগে- এমন প্রশ্নে বলেন, “হুমায়ূন আহমেদ আছেন, ইমদাদুল হক মিলন আছেন। বাংলাদেশে যে মানুষটি আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছেন তিনি হলেন, আল মাহমুদ। এত শক্তিমান কবি পশ্চিমবঙ্গেও কম আছেন। আরেকজন কবি আছেন, সে বেশি লিখে না, অল্প লিখে। শব্দঘরে বেরিয়েছিল জুয়েল মাজহার বলে একজনের কবিতা। সে রিপোর্টার। অসাধারণ কবিতা লিখেছিল। আমি তাকে খুঁজে খুঁজে বের করেছি।”
পশ্চিমবঙ্গের নতুন লেখকদের মধ্যে স্মরণজিৎ, প্রচেত গুপ্ত, উল্লাস মল্লিকের, কৃষ্ণেন্দু, সৌরভ প্রমুখের লেখা ভালো লাগে বলে জানান। ইংরেজী লেখকদের মধ্যে দস্য়ভস্কি, চেখভ তার পছন্দ।
পরিবেশ নিয়েও তিনি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “আমরা যে ভুবনে বাস করছি সেই ভুবনটাকে আমরাই ধ্বংস করছি। এই যে আমাজনে আগুন লাগলো। আমি তো মনে করি আমাজানে আগুন লাগানো হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, ‘আমাদের দেশে তো এখন প্রচণ্ড শীত। তাহলে কীভাবে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কথা স্বীকার করবো।’ তিনি বুঝতেই পারছেন না যে ক্লাইমেট আর ওয়েদার এক জিনিস নয়। সেটা বুঝতে না পারলে এমন মন্তব্যই করা হবে।”
নতুন লেখকদের নিয়ে তিনি বলেন, আত্তীকরণ না হলে লেখা হয় না। সেটা সাহিত্য নয়, আবর্জনা বা সুইসাইডাল টাইপ।
তার নিজের লেখা নিয়ে নিজেই শুরুতে উদ্বিগ্ন ছিলেন, তখন কেই এসব নিতে পারেনি, কিন্তু এখনকার জেনারেশন সেটা গ্রহণ করেছেন- তাই সাহিত্যে তার অপ্রাপ্তি নেই।
দেড় ঘণ্টা আলাপচারিতায় অংশ নেন প্রখ্যাত এই সাহিত্যিক। সবশেষে পাঠকদের অটোগ্রাফ দেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।
Leave a reply