সৌদি আরবে নির্বাসিত তিউনিসিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদিন বেন আলি বৃহস্পতিবার মারা গেছেন। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
নিজ দেশে একটি অবাধ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চার দিন পরেই তিনি পরলোকগমন করলেন। তার অসংযত বিলাসী জীবনযাপন ও নিপীড়নে দেশটিতে আরব বসন্ত নিয়ে এসেছিল। ৯ বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যের গণজাগরণে প্রথম একনায়ক অপসারিত হলেন তিনি।
বেশ কয়েক বছর ধরে মূত্রথলির ক্যান্সারে ভোগার পর গত মাস তিনেক ধরে তিনি একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ছিলেন।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বেন আলির পারিবারিক আইনজীবী মুনির বিন সালহা বলেন, সৌদি আরবে তিনি মারা গেছেন। তিউনিসিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সাবেক এই প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
আরব বসন্ত থেকে উৎসাহিত হয়ে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে তিউনিসিয়ায় বেন আলির নিপীড়নেরে বিরুদ্ধে ব্যাপক গণবিক্ষোভ দেখা দিলে তিনি সৌদি আরবে সপরিবারে পালিয়ে যান। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।
মিসর, সিরিয়া, লিবিয়া, বাহরাইন ও ইয়েমেনে ওই বছর আরব বসন্ত দেখা দিয়েছিল। কোনো কোনো দেশে যার রেশ এখনও চলছে।
পালিয়ে যাওয়ার পর সৌদি রাজপরিবার তাকে নীরবভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছিল। দেশে এনে তাকে বিচারের জন্য তিউনিসিয়ায় প্রত্যর্পণের অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করেছেন সৌদি শাসকরা।
ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার মাস ছয়েক পরে অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির দায়ে আদালত তাকে এবং তার স্ত্রী লায়লা ট্রাবেলসিয়াকে ৩৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ ছাড়া ছয় কোটি ৬০ লাখ ডলার জরিমানা করেন।
অবৈধ মাদক, অস্ত্র বহন ও তার প্রাসাদের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ চুরির দায়েও তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তার ২৩ বছরের শাসনামলে বিরোধীদের হত্যার দায়েও তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বলে খবরে বলা হয়েছে।
তিউনিসিয়ার লোকজন যখন অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তার অপচয় ও বিলাসবহুল জীবন লোকজনকে বিক্ষোভে নামতে বাধ্য করেছে।
মানুষের দুঃখকষ্টকে তিনি কখনই গ্রাহ্য করতেন না। এমনকি মোহাম্মদ বুয়াজিজি নামের এক ফলবিক্রেতা দেশটির পুলিশের আচরণে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।
রোববারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে তিউনিসিয়ায় একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে দুই রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীকে দ্বিতীয় দফা ভোটের দিকে নিয়ে গেছে, যা বেন আলির শাসনামলে চিন্তাও করা যেত না।
তিনি ক্ষমতা থেকে তার সরে যাওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বেশ কয়েকটি একই ধরনের গণজাগরণ দেখা দিয়েছিল। মিসরীয় সামরিক শাসক হোসনি মোবারক ও লিবিয়ার একনায়ক মোয়াম্মার গাদ্দাফিও ক্ষমতাচ্যুত হন।
এছাড়া গত আটবছর ধরে সিরিয়ায় ব্যাপক বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধ চলছে।
Leave a reply