‘১৯৫১ সালে সারা দেশে এনআরসি হয়েছে শুধুমাত্র আসামকে বাদ দিয়ে। তৎকালীন সরকারের ভুলে প্রক্রিয়াটি এই রাজ্যে ৭০ বছর পিছিয়ে যায়, তাই এটি বাস্তবায়নে ছোটখাটো সমস্যা থাকা খুব স্বাভাবিক। তবে আমি কথা দিচ্ছি, এগুলো আস্তে আস্তে শুধরে নেয়া হবে। সত্যিকারের ভারতীয় এবং নির্যাতিত অমুসলমান শরণার্থীরা ভারতীয় নাগরিকত্ব থেকে কোনওভাবেই বঞ্চিত হবেন না। যারা ধর্মীয় এবং সামাজিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৫ সাল অব্দি ভারতে এসেছেন তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবেই।’
এমনটাই আশ্বাস দিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব। প্রাক্তন বিধায়ক প্রয়াত বিমলাংশু রায়ের ৮১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এই প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
বিমলাংশু রায় ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানটি শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল বক্তা হিসেবে অংশ নেন রাম মাধব।
ভাষণের শুরুতে তিনি বলেন, “বরাক উপত্যকা মূলত বাংলাদেশ থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা হিন্দুদের বাসভূমি। আমাদের আদর্শ পুরুষ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী এই ভূমিকে বাংলাদেশে যেতে দেননি। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বলেছিলেন ব্রিটিশ ভারতকে ভাগ করেছে এবং তিনি আসামকে পাকিস্তানে যেতে না দিয়ে পাকিস্তানের ভাগ করেছেন। তিনি খণ্ডিত ভারতের অখণ্ডতা রক্ষা করতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন। তাই প্রত্যেক বাঙালির প্রতি আমাদের বিশেষ শ্রদ্ধা রয়েছে। এনআরসি থেকে বাদ পড়া ১৯ লক্ষের অনেকেই এমন আছেন যাদের পরিবারের নাম উঠেছে অথচ তাদের নাম বাদ পড়েছে। এধরনের ক্ষেত্রে খুব সহজে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আমাদের হিসাব মতে প্রায় চার লক্ষ মানুষ নথিপত্রের অভাবে এনআরসিতে আবেদন করেননি। তাদের কথা আপাতত ভাবা হচ্ছে না। সবাইকে আপন করা এবং নির্যাতিতকে আশ্রয় দেওয়া ভারতবর্ষের ডিএনএতে রয়েছে। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে প্রত্যেক জাতিই ভারতবর্ষে নিরাপদ আশ্রয়ে পেয়েছিলেন। আমরা যদি অন্য দেশের সংস্কৃতিকে আশ্রয় দিয়ে রক্ষা করতে পারি তাহলে নিজের মানুষদের বাঁচানোর ক্ষমতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জম্মু কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা উঠিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন ৭০ বছর পুরনো ঐতিহাসিক ভুল কিভাবে শুধরে নেওয়া যায়। ঠিক একইভাবে নাগরিকত্ব বিল এনে নির্যাতিত শরণার্থীদের সুরক্ষা দেবেন তিনি এবং তার সঙ্গে আমরা রয়েছি।”
“বিল্ডিং আ নিউ ইন্ডিয়া: ইউনাইটেড, স্ট্রং অ্যান্ড প্রসপেরাস” শীর্ষক আলোচনায় তিনি আরও বলেন, “নিউ ইন্ডিয়ার অর্থ আমেরিকার মতো ভারত নয়, এর মানে হচ্ছে ভারতের মত ভারত। মহাত্মা গান্ধী চেয়েছিলেন গ্রামকে উন্নত করে শহরে আসতে, এটাই ছিল তাঁর স্বপ্নের ভারত। কিন্তু জহরলাল নেহেরু সেটা হতে দেননি। দুষ্কৃতীর হাতে মহাত্মা গান্ধীর হত্যার কিছুদিন আগে তিনি বলেছিলেন, নেহেরু যে ভুল করছেন এটা বুঝতে ভারতবর্ষের ৫০ বছর লাগবে। তার কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলেছে এবং আজ দেশের মানুষ নিজেদের ভুল বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্বাধীনতার পর কংগ্রেস নেতারা দেশের মানুষকে বলেছিলেন আপনাদের কিছু করতে হবে না এবার আমরা দেশ চালাবো। কিন্তু আমরা বলি দেশের উন্নতিতে প্রত্যেক মানুষের যোগদান প্রয়োজন। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পাওয়াকে শুধুমাত্র ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী। দেশের প্রত্যেক ব্যক্তির আর্থিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সামাজিক স্বাধীনতা একদিনে আসে না। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শকেই নরেন্দ্র মোদী আজ দেশের প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ভারতবর্ষ এমন উন্নত স্থানে পৌঁছবে যে প্রত্যেক ভারতীয়, সে বিশ্বের যেখানেই থাকুক, নিজের দেশকে নিয়ে গর্বিত বোধ করবে।”
অনুষ্ঠানে রাম মাধবের সঙ্গে যোগ দেন ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, বিমলাংশু রায় ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন বাণী রায়, শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়, রাজ্যের বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, আসাম বিধানসভার উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দিলীপ চন্দ্র নাথ ও অন্যান্যরা। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং অতিথিদের আপ্যায়নের মাধ্যমে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন জিটিভির সারেগামাপা লিটল চ্যাম্পস খ্যাত শিল্পী স্বর্ণালী আচার্য। অনুষ্ঠানের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজদীপ রায় বলেন, প্রয়াত নেতা বিমলাংশু রায়ের স্মৃতিতে ২০১০ সালে অনুষ্ঠানটি শুরু করা হয়। প্রথম ভাষণটি রেখেছিলেন বিজেপি দলের শক্তিশালী নেতা প্রয়াত অরুণ জেটলি। তারপর সুরেশ প্রভু, রবিশঙ্কর প্রসাদ, হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মতো নেতারা এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
Leave a reply