শফিক ছোটন, নওগাঁ:
প্রবীণ নিবাস ‘বেলা শেষে’। অবহেলিত প্রবীণ নারীদের জন্য এই নিবাস গড়ে তুলেছেন নওগাঁর নারী উদ্যোক্তা তছলিমা ফেদৌস। সমাজ ও পরিবারে অবহেলিত প্রবীণ নারীদের এখানে এনে খাবার দেন ও পরিচর্যা করেন তিনি।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসে সন্ধ্যায় নিবাসের বারান্দায় বসে মায়েরা যখন খাবারের অপেক্ষা করছিলেন, তখন হঠাৎই সেখানে হাজির নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো: হারুন অর রশিদ। সাথে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান, নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নবির উদ্দিন, সাধারন সম্পাদক নাছিমুল হক বুলবুল।
ডিসির আগমনে খানিকটা জড়ো সড়ো হয়ে বসলেন বৃদ্ধ মায়েরা। আঁচল টেনে মুখ ঢাকলেন অনেকে। ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তসলিমা ফেরদৌস। জেলা প্রশাসক ভালমন্দ জিজ্ঞাসা দিয়ে কথা শুরু করতেই অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেলেন বৃদ্ধ মায়েরা। পরিচয় দিয়ে নিজে থেকেই মাটিতে পাতানো বিছানায় মায়েদের পাশে বসে পড়লেন ডিসি। শুরু হলো খোঁজ খবর নেয়ার পালা। পরিচয় পেয়ে বৃদ্ধা রেজিয়ার চোখের কোনে জল ছলচল করছিলো। অনেকেই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়লেন। মনের অব্যক্ত কথাগুলো খুলে বললেন।
পাশের গ্রামের আমিনা খাতুন জানালেন- বয়স সত্তরের কাছাকাছি। ১ মেয়ে ছিলো বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি চলে গেছে। আমিনার স্বামী মারা যাওয়ার পর বড় একা হয়ে পড়েন। অভাব অনটনে খেয়ে না খেয়ে কেটেছে বেশ কয়েক বছর। অবশেষে ঠাঁই মিলেছে ‘বেলা শেষে’ প্রবীণ নিবাসে। মাঝে মধ্যে স্বামীর ভিটামাটি দেখতে যান; আবার চলে আসনে।
জেলা প্রশাসককে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন আমিনা, খোতেজা, তছুআরা, আবিজান, সফিনা বেওয়াসহ সকলেই। বৃদ্ধাদের কথায় উঠে আসে অবহেলা বঞ্চনা দু:খ কষ্টের হৃদয় বিদারক একেকটি গল্প। তাদের অতীত কষ্টের কথায় আবেগ আপ্লুত হলেন জেলা প্রশাসকও। একে একে সকলের সাথে কথা বলে খোঁজ খবর নিলেন। এখানে কে কোন ঘরে, কোন বিছানায় থাকেন। কী খাওয়া হয় খোঁজ খবর নিলেন।
জেলা প্রশাসক আর বৃদ্ধাদের আলাপচারিতার মধ্যেই রাতের খাবার চলে এলো। তছলিমা তার অপর এক সহযোগীকে নিয়ে খাবার পরিবেশন করলেন। তিনি আগে থেকেই রান্না করে রেখে ছিলেন। এক সারিতে বসে খাবার খেলন জেলা প্রশাসক হারুন অর রশিদ। সবাইকে মিষ্টি মুখ করালেন ডিসি। খাওয়া শেষ হলো। যেন আলাপচারিতা যেন শেষ হলোনা। প্রবীণদের জন্য কিছু সু-ব্যবস্থার আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক।
বেলা শেষে’র উদ্যোক্তা তছলিমা ফেরদৌস জানান, নওগাঁ শহরে আড্ডায় কফি নামে একটি রেষ্টুরেন্ট আছে তার। সেখানকার আর্থিক সহায়তায় চলে ‘বেলা শেষে’। প্রবীণ মায়েরা যাতে অবহেলায় কোথাও পড়ে না থাকে সেজন্য তিনি গড়ে তুলেছেন বেলা শেষে প্রবীণ নিবাস।
Leave a reply