বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বিশ্বগণমাধ্যমেও ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে।
ফরাসি গণমাধ্যম এএফপি, যুক্তরাষ্ট্রের ভয়েস অব আমেরিকা, কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা ও ভারতীয় দৈনিক হিন্দুতে এই হত্যার খবর এসেছে।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করায় ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। এ নিয়ে রাজধানী ঢাকা ও রাজশাহীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ চলছে।
ন্যায়বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। শিক্ষকরাও যোগ দিয়েছেন সেই বিক্ষোভে।
ঢাকার উপপুলিশ কমিশনার মুন্তাসিরুল ইসলাম এএফপিকে বলেন, আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে জেরা করতে ছাত্রলীগে নেতাদের হাজতে নেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে তার মরদেহ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীদের বরাতে গণমাধ্যম বলছে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে জেরা ও নির্যাতন করেছেন।
ছাত্রলীগ নেতা আশিকুল ইসলাম বিটু বলেন, একটি ইসলামপন্থী দলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আবরার ফাহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে আবরার ফাহাদ ফেসবুকে একটি পোস্ট দিলে তা ছড়িয়ে পড়ে। এতে তিনি বাংলাদেশের একটি নদী থেকে ভারতকে পানি দিতে সরকারের চুক্তির সমালোচনা করেছিলেন।
এএফপি জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়েকজন সদস্য হত্যা, সহিংসতা ও লুটতরাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগ কুখ্যাতি অর্জন করেছে।
গত বছর শিক্ষার্থীদের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে সংগঠনটি সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছে। একটি বেপরোয়া বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর ওই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল।
গত মাসে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপাতি ও সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি নিয়ে আবরার ফাহাদ প্রশ্ন তুলেছিলেন।
পত্রিকাটি জানায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা জেরা করার সময় তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।
তার বন্ধু দ্য হিন্দুকে বলেন, আবরার ফাহাদকে একটি রুমে আটকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসময় ভারত ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পোস্ট দেয়ায় তিনি শিবিরের সঙ্গে যুক্ত কিনা, সেই প্রশ্নও করা হয়েছে।
দোহাভিত্তিক আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ছাত্রলীগের কর্মীরা বুয়েটের এক শিক্ষার্থীকে হত্যার পর ঢাকা ও রাজশাহীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবরারের এক সহপাঠী বলেন, কয়েকটি ফেসবুক পোস্টের কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এটা কাণ্ডজ্ঞানহীন। ছাত্রলীগের গুণ্ডারা তাকে হত্যা করেছেন। আমরা ন্যায়বিচার চাচ্ছি।
আবরার ফাহাদের বাবা ৫৭ বছর বয়সী বারাকাত উল্লাহ বলেন, আমার সন্তান নিরপরাধ ছিলেন। তিনি তার জোরালো মত দিয়েছেন, যেজন্য তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনবিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল আল-জাজিরাকে বলেন, শিবিরের সঙ্গে জড়িত থাকায় আরেক শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করার অধিকার ছাত্রলীগকে কে দিয়েছে? সংগঠনটি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তাদের এসব তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
এছাড়া ভয়েস অব আমেরিকাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশ পেয়েছে।
Leave a reply