সেলিনা ম্যাকডোনাল ৪২ বছর যাবত খুঁজে ফিরছেন পিতা-মাতাকে। তার জন্মস্থান জামালপুরের সরিষাবাড়ির গাইতিপাড়া গ্রামে।
ওই গ্রামে গিয়ে পিতা-মাতাকে খুঁজছেন তিনি। তাদের না পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সেলিনা ম্যাকডোনাল। গ্রামের মেয়েদের জড়িয়ে ধরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবার জন্মস্থান নিজ গ্রামে আসবে বলে জানান তিনি।
আজ থেকে ৪২ বছর আগে তার পিতা-মাতা দারিদ্র্যের কারণে ৫ দিন বয়সী শিশুকন্যাকে রাস্তার পাশে ফেলে অন্যত্র চলে যান। কয়েকজন গ্রামবাসী শিশুটিকে দেখে একটি এতিমখানায় নেয়ার উদ্যোগ নেন।
একজন বিদেশি এনজিওকর্মী শিশুকে লালন-পালনের জন্য নিতে চাইলে গ্রামের লোকজন ওই শিশুকে তার হতে তুলে দেন। তিনি প্রথমে সেলিনাকে কানাডা ও পরে জার্মানিতে নিয়ে যান।
ওই শিশু এখন সেলিনা মেগডোনাল নামে জার্মানিতে বসবাস করেন। ৪২ বছর পর পিতা-মাতার খোঁজে তিনি বাংলাদেশে আসেন।
জামালপুরের সরিষাবাড়িতে পিতা-মাতাকে খুঁজে না পেয়ে বুধবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবে এসে সেলিনা ম্যাকডোনাল তার আবেগাপ্লুত অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
তিনি জানান, জন্মস্থানের প্রতি মায়ার কারণে তিনি বাংলাদেশে আসেন এবং পিতা-মাতার খোঁজ করেন। আক্ষেপ নিয়ে ফিরে গেলেও আবারও তিনি বাংলাদেশে আসবেন। এ ছাড়াও আগামী দুই সপ্তাহ তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। এ সময়কালে তিনি বগুড়া ও খুলনার সুন্দরবনসহ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করবেন। পরে ঢাকায় এসে জার্মানির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
সেলিনা ম্যাকডোনালকে তার পালিত পিতা জন ম্যাগডোনাল ১৯৭৬ সালের জুন বা জুলাই মাসে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার গাইতিপাড়া গ্রাম থেকে দত্তক হিসেবে নিয়ে যান। জন ম্যাকডোনাল তখন একটি বেসরকারি শিশু সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করতে আসেন।
বাংলাদেশে কাজ শেষে জন ম্যাকডোনাল শিশু সেলিনাকে জার্মানি নিয়ে যান এবং পরে একটু বড় হলে তাকে একটি স্কুলে ভর্তি করান।
সেলিনা ম্যাকডোনালের বয়স যখন ৬ বছর তখন তিনি জানতে পারেন তাকে বাংলাদেশ থেকে নেয়া হয়েছে এবং জন ম্যাকডোনাল তার পালিত পিতা। তিনি জার্মানিতে টুয়েলভ ক্লাস পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। একপর্যায়ে তিনি স্টেফান নামে এক জার্মান নাগরিককে বিয়ে করেন। ম্যাকডোনাল দম্পতির বর্তমানে এঞ্জেলা (২২) নামে মেয়ে ও ফিন (১৫) নামে পুত্র রয়েছে।
সেলিনা ম্যাকডোনাল জানান, তার স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের কাছে এক হাসপাতালের চিকিৎসক মার্ক সেয়ারার সঙ্গে পরিচয় হয়। একই হাসপাতালে তিনি চাকরি করনে। একপর্যায়ে তিনি মার্ক সেয়ারারকে নিয়ে বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
এক বছর পর গত ৪ অক্টোবর তিনি বন্ধু মার্ক সেয়ারারকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। এখানে এক জার্মান প্রবাসী বাংলাদেশির আশ্রয়ে এক হোটেলে উঠেন। ওই বাংলাদেশি ময়মনসিংহে বসবারত অপর এক জার্মান প্রবাসী দেলোয়ার হোসেনকে সেলিনা ম্যাকডোনালকে সহায়তা করার অনুরোধ করেন।
সেলিনা ম্যাকডোনাল গত ৭ অক্টোবর ময়মনসিংহে আসেন এবং দেলোয়ার হোসেনের সহায়তায় সেলিনা ম্যাকডোনাল জামালপুরের গাইতিপাড়া গ্রামে যান।
দেলোয়ার হোসেন জানান, গত মঙ্গলবার জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলায় প্রায় ৪ ঘণ্টা খুঁজাখুঁজির পর সেলিনা ম্যাকডোনালের জন্মস্থান গাইতিপাড়া গ্রামের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু সেলিনা ম্যাকডোনালের ছোটবেলার ছবি দেখিয়ে এবং বিভিন্ন পরিচয় দিয়েও তার পিতা-মাতার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
সেলিনা ম্যাগডোনাল ওই বিভিন্ন বয়সের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং আবেগ জড়িত কণ্ঠে তার পিতা-মাতার খোঁজ করেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসলেও আবারও তিনি পিতা-মাতার খোঁজে গাইতিপাড়া গ্রামে আসবেন বলে জানান।
সেলিনা ম্যাকডোনাল বুধবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবে আলাপচারিতার একপর্যায়ে বলেন, তার পালিত পিতা জন ম্যাকডোনাল গুগল ম্যাপের মাধ্যমে তার জন্মস্থান জামালপুরের সরিষাবাড়ি শনাক্ত করেন। এবং ফেসবুকে মাধ্যমে তার জন্মস্থানের একটি মসজিদের ছবি প্রিন্ট করে সেলিনা ম্যাকডোনালকে দেন। এ সব সূত্র ধরেই তিনি ময়মনসিংহের দেলোয়ার হোসেনের সহায়তায় জামালপুরের গাইতিপাড়া গ্রামের সন্ধান পান।
দেলোয়ার হোসেন আরও জানান, তিনি জার্মানিতে ছিলেন। বর্তমানে ময়মনসিংহ শহর বাইপাস রোডে একটি আবাসিক হোটেল করেছেন এবং ব্যবসা করছেন। তার জার্মান প্রবাসী ঢাকার বন্ধুদের অনুরোধে সেলিনা ম্যাকডোনালকে তার হোটেলে স্বল্পমূল্যে থাকার ব্যবস্থা করেছেন।
Leave a reply