মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের ধারণক্ষমতার ৪ গুণ বেশি বাস রাখা হয়। অতিরিক্ত বাস থাকায় প্রধান সড়কসহ আশপাশের রাস্তাগুলোয় পার্কিং করা হচ্ছে দূরপাল্লার এসব যানবাহন। এতে সড়কে তীব্র যানজটের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগে পড়ছেন মানুষ। বাসচালকদের টার্মিনালে প্রবেশে রীতিমতো চলে প্রতিযোগিতা। ফলে টার্মিনালের সামনের সড়কে বাসের একাধিক লাইন সৃষ্টি হয়ে তৈরি হয় যানজট। যদিও মহাখালী ট্রাফিক বিভাগের নিয়মে এক লাইনে টার্মিনালে প্রবেশের কথা থাকলেও মানছে না বাসচালক ও হেলপাররা।
ট্রাফিক বিভাগ বলছে, টার্মিনালে তুলনামূলক জায়গা খুবই কম। একটি গাড়ি বের হলে ১০টি গাড়ি প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করে। সড়কে যানজট কমাতে টার্মিনালে বাস এক লাইনে প্রবেশের নিয়ম করে দেয়া হলেও মানছে না বাসচালক ও হেলপাররা। কিছু সময় একাধিক লাইন হওয়ায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। কিছু কিছু বাস লাইন ছাড়া এসে টার্মিনালে প্রবেশের চেষ্টা করে। এতে যানজট আরও বেড়ে যায়। চালকদের দাবি, বহুদূর থেকে এসে বেশিক্ষণ রাস্তায় থাকা যায় না। ট্রাফিক পুলিশ মহাখালী ফুটওভার ব্রিজের পর আর লাইন করতে দেয় না। এতে আমাদের বাধ্য হয়ে লাইনের বাইরে গিয়ে টার্মিনালে প্রবেশ করতে হয়।
এদিকে নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মহাখালী বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী, নগর পরিকল্পাবিদ, আরবান ডিজাইনাররা। তবে মহাখালী টার্মিনালে দিন দিন বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। অপরিকল্পিভাবে গড়ে ওঠা এ টার্মিনাল বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি বাস রাখা হয়। এতে মহাখালী থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। দূরপাল্লার এসব পরিবহনের কারণে নগরীর মহাখালী থেকে টঙ্গী পর্যন্ত এয়ারপোর্ট রোডের যানজট ক্রমেই বাড়ছে। সড়কটির কোনো কোনো অংশে দীর্ঘ যানজটে নিত্যদিনের সঙ্গী। এ সড়কের অন্তত ১২ থেকে ১৫ শতাংশ দখলে রাখছে মহাখালী টার্মিনালের গাড়ি।
জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে বৃহত্তর ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের বাস রাখার জন্য মহাখালী বাস টার্মিনাল করা হয়। যেখানে বর্তমানে বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২০টি জেলায় এ টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল করছে। এ বাসগুলো মূলত আবদুল্লাহপুর হয়ে মহাসড়কে যাচ্ছে। টার্মিনালটিতে আড়াইশ’র মতো বাস রাখা যায়। কিন্তু মালিক সমিতির দাবি ২০ রুটে প্রায় এক হাজার বাস চলাচল করছে। ধারণক্ষমতা না থাকায় টার্মিনালের সামনে শহীদ তাজউদ্দিন সড়ক ও আশপাশের রাস্তায় পার্কিং করা হচ্ছে শত শত বাস। এতে রাস্তার দুই পাশে সড়কের একাংশ দখল হয়ে যাচ্ছে। যানবাহনের দীর্ঘলাইনের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগে পড়ছে এ সড়কে চলাচলকারী পথচারী ও যাত্রীরা।
দেখা যায়, টার্মিনালের বাইরেও অবাধে ওঠানামা করছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা। অন্যদিকে টার্মিনালে প্রবেশমুখী বাসের সংখ্যা অধিক থাকায় একাধিক লাইনের মাধ্যমে প্রবেশ করে বাসচালকরা।
একাধিক বাসচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টার্মিনালে প্রবেশের জন্য দীর্ঘলাইন ধরে থাকতে হয়। দু’শ থেকে তিনশ’ কিলোমিটার জার্নি করে কোনো চালকই টার্মিনালে প্রবেশের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে চায় না। আবার টার্মিনালে প্রবেশের আগে দুটি অয়েল পাম্প রয়েছে। বাসের তেল নিয়ে টার্মিনালে প্রবেশ করতে চাইলে একাধিক লাইন তৈরি হয়।
আরেক চালক রমিজউদ্দিন বলেন, একসঙ্গে অনেক বাস টার্মিনালমুখী হয়ে গেলে একাধিক লাইন হয়ে যায়। তাছাড়া টার্মিনাল থেকে মহাখালী ফুটওভার ব্রিজের পর থেকে ট্রাফিক পুলিশ আর লাইন করতে দেয় না। এতে আরও লাইন করতে হয়।
এদিকে মহাখালী ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার সুবীর রঞ্জন দাস বলেন, মহাখালী বাস টার্মিনালে গাড়ি রাখার জায়গা আছে দু’শ। অথচ টার্মিনালের বাস আছে দেড় হাজারেরও বেশি। টার্মিনালে বাস প্রবেশে সড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।
মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক জানান, টার্মিনালটি মূলত ৩০০ বাসের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে ভেতরে ২৫০টি গাড়ি রাখা যায়। কিন্তু বর্তমানে এ টার্মিনালের জন্য নির্ধারিত ২০ রুটে প্রায় নয়শ’ থেকে এক হাজার বাস চলাচল করে। ধারণক্ষমতার বেশি বাস থাকায় বাধ্য হয়েই টার্মিনালের বাইরের রাস্তার ওপর বাসগুলো রাখতে হচ্ছে। এতে বিভিন্ন সমস্যায়ও পড়ছেন বাস মালিকরা। রাস্তায় বাস রাখলে যন্ত্রাংশ চুরি হয়। টার্মিনালের পেছনে এবং পাশে কিছু খালি জায়গা রয়েছে। সেগুলো টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত করা যেতে যারে। টার্মিনালে জায়গা বৃদ্ধি হলে এসব সমস্যা দূর হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) আবদুল লতিফ খান বলেন, মহাখালী বাস টার্মিনালে অধিক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি অত্যাধুনিক ও মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্প ওয়ার্ল্ড ব্যাংক করবে। টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের একাধিকবার মিটিং হয়েছে। খুব দ্রুতই আধুনিকায়ন কাজ শুরু হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
Leave a reply