বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নানা সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট ছিলেন ক্রিকেটাররা। সোমবার পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। নিজেদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ে একজোট হয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটাররা। জাতীয় দলের সবাই যোগ দিয়েছেন দাবি আদায়ের এই নজিরবিহীন আন্দোলনে। বোর্ডের কাছে ১১ দফা দাবি পেশ করে খেলোয়াড়রা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেটীয় কার্যক্রম থেকে তারা বিরত থাকবেন। ক্রিকেটারদের মতো বোর্ডও কঠোর অবস্থান নেয়ায় টালমাটাল দেশের ক্রিকেট। দুই দশক আগেও একবার ধর্মঘট ডেকেছিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটারা। তবে তখনও বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা না পাওয়ায় তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী ছিল না।
বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে খেলোয়াড়দের ধর্মঘটে যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলে ধর্মঘটের অসংখ্যা নজির রয়েছে। এ বছরই যুক্তরাষ্ট্র ও নরওয়ের নারী ফুটবলাররা ন্যায্য পারিশ্রমিকের দাবিতে বিশ্বকাপ বয়কটের হুমকি দিয়েছিলেন। ‘ভদ্রলোকের খেলা’ ক্রিকেটেও খেলোয়াড়দের বিদ্রোহ ও ধর্মঘটের নজির বিরল নয়। উপমহাদেশের ক্রিকেটে বিদ্রোহের প্রথম আগুন জ্বলেছিল ভারতে। ১৯৮৯ সালে পারিশ্রমিক নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন ভারত জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা, যার জের ধরে ছয় মাস নিষিদ্ধ হয়েছিলেন দিলীপ ভেংসরকার। ২০১৩ সালে আরও বড় বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে লংকান ক্রিকেটে। বেতন-ভাতা নিয়ে অসন্তোষ থেকে বাংলাদেশ সফরে যেতে অস্বীকৃতি জানান শ্রীলংকার ক্রিকেটাররা। বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারা। শেষ পর্যন্ত বোর্ডের সঙ্গে সমঝোতায় এসে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে সই করে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন সাঙ্গাকারারা। ২০১৬ সালে আবারও কেন্দ্রীয় চুক্তিতে সই করতে বেঁকে বসেন ১৭ জন লংকান ক্রিকেটার। সেই ধর্মঘটও শেষ হয়েছিল বোর্ড ও খেলোয়াড়দের মধ্যে সমঝোতায়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে তো ডালভাত হয়ে গেছে খেলোয়াড়দের বিদ্রোহ ও ধর্মঘট। ২০০৫ সাল থেকেই সেখানে ঝামেলা লেগে আছে। ২০১৪ সালে চরমে পৌঁছেছিল বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্ব। নিজেদের দাবি আদায়ে সিরিজের মাঝপথে ভারত সফর স্থগিত করে দেশে ফিরে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। যার জের ধরে নেতৃত্ব হারান ডুয়ানে ব্রাভো। অনেক তারকা খেলোয়াড় সরে দাঁড়ান জাতীয় দল থেকে। উইন্ডিজ ক্রিকেটে সেই অস্থিরতা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। সাম্প্রতিক সময়ে পারিশ্রমিক নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার জন্ম হয় অস্ট্রেলিয়ায়। বাংলাদেশ সফরের আগে ২০১৬ সালে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে কিছুদিনের জন্য বেকার হয়ে পড়েছিলেন দেশটির সব পেশাদার ক্রিকেটার! বোর্ডের লভ্যাংশের ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত। পরে স্মিথ, ওয়ার্নারদের দাবি মেনে নেয় সিএ।
সবজান্তা গুগল বলছে, ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ধর্মঘট ঘটেছিল অস্ট্রেলিয়াতেই। সাকিবদের মতোই ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ে ১৩৫ বছর আগে প্রথম ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দল। ১৮৮৪ সালে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে আগের ম্যাচের একাদশের একজনও খেলেননি! টিকিট বিক্রির অর্থের ৫০ শতাংশ দাবি করেছিল অস্ট্রেলিয়া দল। বোর্ড তা না মানায় অধিনায়ক বিলি মারডাকের নেতৃত্বে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে অস্বীকৃতি জানান মূল দলের খেলোয়াড়রা। বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় সারির দল নামাতে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। সেই ম্যাচে ১০ উইকেটে হারার পর তৃতীয় টেস্টের আগেই ঝামেলা মিটে যায়। ১৮৯৬ সালে আরেক অ্যাশেজে একইভাবে ম্যাচ ফি দ্বিগুণ করার দাবিতে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন পাঁচ ক্রিকেটার।
Leave a reply