ঘরোয়া ক্রিকেটে পারিশ্রমিক কেমন?

|

প্রথমে ১১ দফা ও পরবর্তীতে আরও দু’দফা বাড়িয়ে ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলনে যাওয়া ক্রিকেটারদের অধিকাংশ দাবি বিসিবি মেনে নেয়ায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন তারা। শুক্রবার ভারত সফরের জন্য জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেবেন সাকিব-তামিমরা। শনিবার পুনরায় শুরু হবে জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) তৃতীয় রাউন্ড।

ক্রিকেটার দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ঘরোয়া ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বাড়ানো। সেটি কতটা যৌক্তিক বা আদৌ যৌক্তিক কিনা তা অনুধাবনের জন্য জাতীয় লিগের ক্রিকেটারদের বর্তমান পারিশ্রমিক সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

শুরুতেই বলে রাখা দরকার, দেশে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের টুর্নামেন্ট হয় দুটি। একটি জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) এবং আরেকটি বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল)। আর একমাত্র ‘লিস্ট-এ’ মর্যাদসম্পন্ন প্রিমিয়ার লিগ। এছাড়া বিপিএল’র মতো ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্টও হয় বাংলাদেশে। তবে, অধিকাংশ ঘরোয়া ক্রিকেটারের জীবিকা মূলত এনসিএল ও বিসিএল-কে ঘিরে।

এনসিএলে প্রতি ম্যাচে অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা পারিশ্রমিক পান ৩৫ হাজার টাকা। আর অনভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা পান ২৫ হাজার টাকা। সেটি বাড়িয়ে যথাক্রমে ৪০ ও ৩০ হাজার করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। বিসিএলে একটি ম্যাচে অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা ম্যাচ ফি পান ৪০ হাজার টাকা। চাউর হয়েছে, সেটি বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা হবে।

এনসিএলে সব ম্যাচে একাদশে থাকলেও একজন ক্রিকেটার সর্বোচ্চ খেলতে পারেন ৬ ম্যাচ। বিসিএলে সর্বোচ্চ ৬ ম্যাচ, কখনও ৩ ম্যাচ। অর্থাৎ তুষার ইমরানের মতো একজন অভিজ্ঞ ও ধারাবাহিক খেলোয়াড় ইনজুরিমুক্ত থেকে সব ম্যাচ খেলতে পারলে বছরে এ দুটো লিগ থেকে আয় করতে পারবেন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাস্তবে অধিকাংশ ঘরোয়া ক্রিকেটারদের আয় এর প্রায় অর্ধেক। অন্যসব কিছু বাদ দিয়ে যারা ক্রিকেটকেই পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়ে তাদের জন্য এই আয় কতটা প্রতুল সে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। কেউ যদি এরপরও মনে দ্বিধায় থাকেন তো জেনে নিন, এই আয়ের ২০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয় এই ক্রিকেটারদের।

দেশের প্রথম ও প্রধান টুর্নামেন্টে চার দিনের ম্যাচে এ পারিশ্রমিক যথেষ্ট অপ্রতুল বলে মনে করেন ক্রিকেটাররা। তাদের দাবি, ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ম্যাচ ফি ১ লাখ টাকা করা হোক।

২০১২ সালে বিসিবিপ্রধান ছিলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রথমবারের মতো দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের চুক্তির আওতায় আনেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা অনুযায়ী তিনটি গ্রেডে ক্রিকেটারদের চুক্তিতে রাখা হয়। ‘এ’ গ্রেডের মাসিক বেতন করা হয় ২৫ হাজার টাকা, ‘বি’ গ্রেডে ২০ হাজার টাকা এবং ‘সি’ গ্রেডে ১৫ হাজার টাকা।

শুরুতে ঘরোয়া ক্রিকেটে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার ছিলেন ১০৫ জন। নাজমুল হাসানের নেতৃত্বাধীন বোর্ড সেই সংখ্যা নামিয়ে এনেছে ৭৯ জনে। এ লম্বা সময়ে পারিশ্রমিক বেড়েছে নামমাত্র। ‘এ’ গ্রেডের ক্রিকেটাররা এখন পান ২৮ হাজার ৭৫০ টাকা, ‘বি’ গ্রেডে ২৩ হাজার টাকা ও ‘সি’ গ্রেডে ১৭ হাজার ২৫০ টাকা।

এর বাইরে অবশ্য জাতীয় ক্রিকেট লিগে ক্রিকেটারদের ম্যাচ চলাকালী দৈনিক ১৫০০ টাকা ভাতা আর ২ হাজার ৫০০ টাকা ভ্রমণ ভাতা দেয়া হয়। এখান থেকে বাঁচানোর সুযোগ কতটুকু? বরং মানসম্পন্ন খাবার ও ভ্রমণের জন্য এই ভাতাও যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন ক্রিকেটাররা।

আর দশজন সাধারণ মধ্যবিত্তের মতো ঘরোয়া ক্রিকেটারদেরও নুন আনতে পানতা ফুরায়। অথচ বিসিবি বিশ্বের পঞ্চম ধনী ক্রিকেট বোর্ড! চাইলেই ক্রিকেটারদের বেতন-পারিশ্রমিক বাড়াতে পারে তারা। আরও চমকে যাবেন যখন জানবেন, নানা ঘটনায় বিপর্যস্ত জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররাও আমাদের খেলোয়াড়দের চেয়ে বেশি বেতন পান।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply