ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ আসামিরই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে, আসামিদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এই টাকা আদায় করে নুসরাতের পরিবারকে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার, ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় শোনার পর ‘রায় মানি না, কেয়ামতের মাঠে দেখা হবে’ বলে আদালতের এজলাসে দাঁড়িয়ে বিলাপ করতে থাকেন ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক ও মামলার আট নম্বর আসামি প্রভাষক আফছার উদ্দিন। আফছার উদ্দিন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। চিৎকার করে তিনি বলতে থাকেন, মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে, আত্মহত্যাকে হত্যা বলে দণ্ড দেয়া হয়েছে। এ রায় মানি না। মাঠে দেখা হবে।
রায়ের সময় মামলার সাত নম্বর আসামি এবং মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ আবদুল কাদের চিৎকার করে মিডিয়াকে দোষারোপ করতে থাকেন। বলেন, এটা সাজানো রায়। মিডিয়ার কারণে আমাদের মিথ্যা সাজা দেয়া হয়েছে। বিচারক টাকা নিয়ে রায় দিয়েছেন।
এ সময় নুসরাতের ভাই নোমানকে হুমকিও দেন আসামি আবদুল কাদের।
বৃহস্পতিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ বেলা সোয়া ১১টার দিকে সব আসামির উপস্থিতিতে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় দেন। রায়ে প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ খুনির সবার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা অন্য আসামিরা হলেন- নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আফছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।
প্রসঙ্গত, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে যৌন হয়রানি করেন। এ ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করলে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে রাফির পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়।
৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
Leave a reply