জাতীয় সম্মেলন ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে কৃষক লীগে। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর দলীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত ভিড় করছেন পদপ্রত্যাশীরা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নিজ নিজ পক্ষে জোর লবিং-তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। মূল দল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন অনেকে। সমর্থকদের নিয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শোডাউনও করেছেন কোনো কোনো সম্ভাব্য প্রার্থী।
আগামী ৬ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের দশম জাতীয় সম্মেলন হবে। ওই দিন বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন করা হবে।
মোতাহার হোসেন মোল্লাকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজাকে সদস্য সচিব করে গঠিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে গঠিত ১৩টি উপকমিটির তত্ত্বাবধানে এ সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। সম্মেলন ঘিরে ১০ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির শেষ সভা এবং ১৯ অক্টোবর বর্ধিতসভা করেছে সংগঠনটি।
১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির কার্যক্রমে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বিশেষ মাত্রা দিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই এ সংগঠনের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর পর হওয়ার কথা থাকলেও এবার সাত বছরেরও বেশি সময় পর সংগঠনের জাতীয় সম্মেলন হচ্ছে। এ কারণে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা আরও বেশি।
অবশ্য জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ইচ্ছাই প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ দুটিতে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ত্যাগী ও দক্ষ নেতাদের কারও নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
কৃষক লীগের আগামী নেতৃত্ব নির্ধারণের জন্য পদপ্রত্যাশীদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ নানা মাধ্যমে আদ্যোপান্ত খোঁজ নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট নেতাদের। আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।
তারুণ্যনির্ভর, ত্যাগী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতৃত্ব চাচ্ছে দলের হাইকমান্ড। ফলে সংগঠনটির শীর্ষ পদসহ আগামী কমিটি থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন টেন্ডার ও চাঁদাবাজি এবং ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িতরা।
পাশাপাশি অন্য দল থেকে এসে সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে যারা বড় পদ বাগিয়ে নিয়েছেন- এমন বিতর্কিত নেতাদেরও জায়গা হবে না নতুন কমিটিতে। তাদের পরিবর্তে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদেরও অগ্রাধিকার দেয়া হতে পারে কৃষক লীগের কমিটিতে।
এবারের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে আগামী দিনে সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে ইচ্ছুক এমন ডজন দেড়েক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। সংগঠনের বর্তমান সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা আবারও একই পদে থাকতে ইচ্ছুক। আবার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজা এবার সভাপতি পদে আসতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
কৃষক লীগে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে কৃষক বা কৃষিকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই অধিকাংশ নেতার। শুধু তাই নয়, বর্তমান কমিটি গত সাত বছরে কৃষকদের নিয়ে একটি কর্মসূচিও হাতে নেয়নি।
অন্যদিকে সারা দেশের জেলা-উপজেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে কমিটিও করতে পারেননি কৃষক লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তাই আগামী ৬ নভেম্বর কৃষক লীগের সম্মেলনে কৃষিকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও যোগ্যরা শীর্ষ পদে জায়গা পাবেন বলে সবার প্রত্যাশা।
এবার সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন কৃষক লীগের বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি খান আলতাফ হোসেন ভুলু, কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা, শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। এ ছাড়া সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. হারুনুর রশীদ হাওলাদারও সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন।
সভাপতি পদে আরও আলোচনায় আছেন কৃষক লীগের সহসভাপতি সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক, সাবেক এমপি ছবি বিশ্বাস, শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, শরীফ আশরাফ হোসেন, আকবর আলী চৌধুরী এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনায় রয়েছেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ সমীর চন্দ। এ ছাড়া সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিল্পব, বিশ্বনাথ সরকার বিটু, আবুল হোসেনও পদপ্রত্যাশা করছেন।
খান আলতাফ হোসেন ভুলু বলেন, আমি কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের মানুষের কথা ভেবে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় রাজনীতি করেছি। রাজনীতি করতে গিয়ে স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে জেলজুলুম সহ্য করেছি। বর্তমানে দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আমি মনে করি, নেত্রী জানেন আমাকে কোন পদে বসানো উচিত।
কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা বলেন, শিক্ষাজীবনে আমি কৃতী ছাত্র ছিলাম। ম্যাট্রিকে বোর্ড স্ট্যান্ডসহ মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ার রেকর্ড আমার আছে।
তৃণমূল থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে করে আমি কৃষক লীগে এসেছি। আমার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডও কৃষিকেন্দ্রিক। সুতরাং আমি প্রত্যাশা করি নেত্রী আমাকে যোগ্য জায়গাতে দায়িত্ব দেবেন।
সূত্র: যুগান্তর।
Leave a reply