১২১ বছর আগে গ্রেফতার হয়েছিল। মুক্তি মেলেনি আজও। সারা গায়ে শিকল জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে জনসমক্ষে। রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা বদলে গেছে, ভেঙে দু’ভাগ হয়েছে ভারত।
বদলে গেছে সবকিছু। শুধু বদলায়নি তার ভাগ্য। বন্দিদশা থেকে মুক্তি পায়নি । কোনো অপরাধ না করেও সেই একইভাবেই বন্দি অবস্থায় আছে পাকিস্তানের পেশোয়ারের ওই বটগাছ!
সত্যিই অবিশ্বাস্য ঘটনা। পেশোয়ারে গেলে এখনও দেখা যায় গাছটিকে। কেন বন্দি করা হয়েছিল গাছটিকে? জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনকালের একটি ঘটনা এই বন্দিত্বের পেছনে দায়ী।
১৮৯৮ সালে লান্ডি কোটাল সেনা ক্যান্টনমেন্টে এই গাছটিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার পর থেকে কোনো বিচার ছাড়াই বন্দি রয়েছে সে।
শোনা যায়, ওই ক্যান্টনমেন্টে ব্রিটিশ সেনা অফিসার জেমস স্কোয়াইড নাকি মদ খেয়ে নেশা করেছিলেন একদিন। সেই নেশার ঘোরে হাঁটার সময় দেখতে পান, বটগাছটি তার দিকে তেড়ে আসছে। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে অফিসারের হুকুম, অ্যারেস্ট করা হোক গাছটিকে। হুকুম মতোই কাজ হল। পাইক-পেয়াদারা ছুটে এসে আষ্টেপৃষ্ঠে শেকল পরিয়ে দিল অত বড় গাছটিকে। সম্প্রতি গাছটিকে নিয়ে এ মানবিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ভারতের একটি জনপ্রিয় দৈনিক। পিটিআই।
তখন থেকেই নাকি শিকলে বাঁধা রয়েছে বেচারা বটগাছ। তারপর ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পায় পাকিস্তান। নতুন সরকারের শাসন শুরু হয়। এরপর কত সরকার এলো গেল। কিন্তু গাছটির ভাগ্য বদল হল না। এত বছর পর, এখনও ওই বটগাছে একটি বোর্ড ঝুলছে। তাতে লেখা ‘আই অ্যাম আন্ডার অ্যারেস্ট।’ কেউ কেউ অবশ্য দাবি করেন, পাকিস্তান-আফগান সীমান্তের লান্ডি কোটালের উপজাতি সম্প্রদায়কে ভয় দেখাতেই বটগাছকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয় ব্রিটিশরাজ।
যাতে ওই এলাকার উপজাতিরা বুঝতে পারেন, কোনোরকম বিরুদ্ধাচরণ করলে, দরকারে এমন শাস্তি তাদেরও দেয়া হবে। কিন্তু সে যুগ তো পেরিয়ে গেছে কবেই। তারপরও এখন পর্যন্ত গাছটিকে কী কারণে বেঁধে রাখা হয়েছে, তার কোনো উত্তর নেই কারও কাছে।
তার পক্ষ নিয়ে কোনো আইনজীবীও কথা বলতে আসেননি আজ পর্যন্ত। ফলে কোনো মামলাও দায়ের করা হয়নি। দুনিয়ার বিরলতম ‘অপরাধী’ বটগাছ হয়ে দর্শনীয় একটি বিষয় হয়ে থেকে গেছে সেটি। পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মুখতিয়ার দুরানি জানিয়েছেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক হলেও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ব্রিটিশ শাসনের সময় উপজাতি বহুল এই এলাকায় আইন-কানুন কতটা ভয়াবহ ছিল, তার উদাহরণ হয়েই রয়েছে এই বন্দি বটগাছ।
Leave a reply