ইতিহাসের বইতে দাসপ্রথার কথা পড়ে আধুনিক মানুষ হয়তো ভাবে- কী বর্বর যুগই না ছিল একসময়! কিন্তু যদি বলি দাসপ্রথা এখনও বহাল তবিয়তে আছে? সম্প্রতি কুয়েতে আধুনিক দাসপ্রথা এবং অনলাইনে গৃহকর্মী ক্রয়-বিক্রয়ের চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করেছে ‘বিবিসি নিউজ অ্যারাবিক’। তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাত্র ২ থেকে সাড়ে ৩ হাজার ডলার খরচ করলেই কেনা যায় গৃহকর্মী। যাদের কোনো মাসিক বেতন নেই। এ সকল গৃহকর্মীদের মোবাইল-পাসপোর্টও জব্দ করা হয়। ফলে, বহির্বিশ্বের সাথে তাদের সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ থাকে।
গৃহকর্মী কেনাবেচার জন্য মালিকরা গুগল-অ্যাপলের তৈরি বিশেষ অ্যাপস এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করা থাকেন বলে বিসিবি’র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। গুগল প্লে স্টোরে থাকা ‘ফর সেল’ নামক একটি অ্যাপ এ কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, ইনস্টাগ্রামে পাওয়া যায় লাখো গৃহকর্মীর ছবি। ‘মেইডস ফর ট্রান্সফার’ বা ‘মেইডস ফর সেল’ হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে অনলাইনে রীতিমতো চলে গৃহকর্মী ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম!
বিবিসির অনুসন্ধানী দল ৫৭ জন অ্যাপস ব্যবহারকারীর সাথে টেলিফোনে কথা বলেন। দেখা করেন অন্তত ডজন খানেক মালিকের সাথে। গৃহকর্মীদের মধ্যে খুঁজে পান শিশুদেরও।
একজন পুলিশ অফিসারকেও খুঁজে পেয়েছে বিবিসি যিনি এভাবে গৃহকর্মী ক্রয় করেছেন। তিনি জানান, আমার গৃহকর্মীটি আফ্রিকান কিন্তু বেশ পরিষ্কার এবং সব কাজ করতে পারে। নেপালি আর ভারতীয়রা খুব নোংরা হয়। আমিই যেহেতু ওর স্পন্সর তাই তার পাসপোর্ট জব্দ করে রেখেছি।
গৃহকর্মীদের ঘরে বন্দি রাখার পাশাপাশি অলিখিত কিছু নীতিমালা চাপিয়ে দেন মালিকরা। যার ফলে, এক অন্ধকার কুয়োর ব্যাঙে পরিণত হয় তারা। যদিও কুয়েত প্রশাসন বলছে, গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে।
কুয়েতের গৃহকর্মী নিয়োগ দফতরের পরিচালক নাসের আল মৌসভী বলেন, দাস ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়টি আইন পরিপন্থী। কোনোভাবেই মালিকরা অনলাইনে তাদের গৃহকর্মীদের বিক্রি করতে পারেন না। ভিডিওতে দেখা যাওয়া (বিবিসির প্রতিবেদনের) মালিকদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। খুব শিগগিরই তারা জবাবদিহিতার মুখোমুখি হবে। কারণ, এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, গৃহকর্মী ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোকেও আইনের আওতায় আনা হোক। ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়টিও তুলেছেন তারা।
জাতিসংঘের সমসাময়িক দাসপ্রথা বিষয়ক প্রতিনিধি ঊর্মিলা ভুলা বলেন, একজন গৃহকর্মী বা শিশুকে নিজ সম্পত্তি হিসেবে বিক্রি করছেন মালিকরা। এটা শুধু জাতীয় নীতিমালাই নয় বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন। আর, গুগল-অ্যাপল এবং ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহি করতে হবে। কারণ, দাসপ্রথার মতো একটি ভয়াবহ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে তাদের প্ল্যাটফর্ম।
বিবিসির প্রতিবেদন প্রকাশের পরই নির্দিষ্ট হ্যাশট্যাগগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে ইনস্টাগ্রাম। সরিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট পোস্ট। অপরাধে ব্যবহৃত অ্যাপস বন্ধ করেছে গুগল প্লে স্টোর’ও।
Leave a reply