ভারতীয় আইনে, বিদেশ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি গ্রহণ করা ভারতীয়দের নিজ দেশে প্র্যাকটিসের লাইসেন্স পেতে ফরেন মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট এক্সামিনেশনে (এফএমজিই) পাস করতে হবে।
দেশটির জাতীয় পরীক্ষা বোর্ডের (এনবিই) অধীনে নেয়া এফএমজিই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই ডাক্তারি পেশার সনদ দেয় ভারত সরকার।
সে লক্ষ্যে প্রতি বছর গড়ে ১৫ হাজারের বেশি বিদেশ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি গ্রহণ করা ভারতীয় এ পরীক্ষায় অংশ নেয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি গ্রহণ করা যেসব ভারতীয় এফএমজিই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তাদের ৭২ শতাংশই ফেল করেছে।
উল্লেখ্য, তিন থেকে চার বছর পর পর বিদেশ থেকে মেডিকেল ডিগ্রি নিয়ে আসা এফএমজিই পরীক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স প্রতিবেদন প্রকাশ করে এনবিই।
সে প্রতিবেদনে এমনই তথ্য পাওয়া গেল।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৬১ হাজার ৭০৮ জন ভারতীয় এফএমজিইতে অংশ নেয়। এর মধ্যে ১ হাজার ২৬৫ জনই বাংলাদেশী মেডিকেল থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ থেকে ডিগ্রি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছেন ৩৪৩ জন। সে হিসাবে পাসের হার মাত্র ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বাংলাদেশী ৪০টি প্রতিষ্ঠান থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়েছেন ভারতীয়রা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিগ্রি দিয়েছে ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং (ইউএসটিসি)।
প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৪১৪ জন এফএমজিইতে অংশ নেয়। এর মধ্যে পাসের হার মাত্র ১৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অর্থাৎ ইউএসটিসি থেকে ডিগ্রি নেয়া ৮২ শতাংশই নিজ দেশে গিয়ে ডাক্তারি পেশার সনদ পেতে ব্যর্থ হয়েছে।
এছাড়া এফএমজিইতে অংশ নেয়া অন্যদের মধ্যে ১৪ জন বাংলাদেশ মেডিকেলের শিক্ষার্থী ছিলেন। এর মধ্যে পাস করেছেন সাতজন। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডিগ্রিধারী ১১ জনের মধ্যে তিন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১৮ জনের মধ্যে আট, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের ৫২ জনের মধ্যে সাত, জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের ৮৮ জনের মধ্যে ৩৩, জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ২১ জনের মধ্যে এক, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ৩২ জনের মধ্যে ১৪, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ১৯ জনের মধ্যে আট, তাইরুন্নেসা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজের ৪৩ জনের মধ্যে ১৪, শাহাবউদ্দীন মেডিকেল কলেজের পাঁচজনের মধ্যে দুই এবং ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ৫৪ জনের মধ্যে ১৮ এফএমজিইতে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
বাংলাদেশ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি গ্রহণ করে ভারতের এফএমজিই পরীক্ষায় এতো বেশি অকৃতকার্য হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. আরমান হোসেন বলেন, ‘ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে গুণগত মানের ডিগ্রি নিয়ে থাকলে তো ফেল করার কথা না। দেশে অনেক মেডিকেল কলেজ আছে। এখন দেখতে হবে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে তারা পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে এমন কিছু প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেগুলোর বিরুদ্ধে নিয়ম ও আইন না মানার অভিযোগ রয়েছে। তাদের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আর যারা নিম্নমানের প্রতিষ্ঠানে পড়ে আসছেন, তারা অকৃতকার্য হচ্ছেন।’
ভারতের মতো একই ঘটনা বাংলাদেশেও ঘটছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের যেসব নাগরিক বিদেশ থেকে পড়ে আসে, আমরাও তাদের পরীক্ষা নিয়ে থাকি। প্রায়ই দেখা যায়, যারা ভালোভাবে পড়ে ভালো মানের ডিগ্রি নিয়ে আসছেন, তারা কোয়ালিফাই হচ্ছেন।’
এনবিই এর প্রতিবেদন অনুযায়ী অকৃতকার্যের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং (ইউএসটিসি) থেকে ডিগ্রি নেয়া ভারতীয়রা।
এ প্রসঙ্গে ইউএসটিসির উপাচার্য মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আগে ইউএসটিসির ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্লাইড হেলথ সায়েন্সের অধীনে মেডিকেল ডিগ্রি দেয়া হতো। এখন সেটি চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পরিচালিত হয়। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ ভালো বলতে পারবেন।’
এদিকে এমবিবিএস ডিগ্রির যে সিলেবাস তার সঙ্গে এফএমজিইর মিল নেই বলে দাবি করেছেন ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্লাইড হেলথ সায়েন্সের অধ্যক্ষ ডা. এহতেশামুল হক।
তিনি বলেন, ‘এমবিবিএস শেষ করে এ টেস্টের প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। যারা ভালো প্রস্তুতি নেন, তারা কোয়ালিফাই হবে। আর যারা প্রস্তুতি না নিয়ে টেস্টে অংশ নেন, তারা ভালো করতে পারবেন না—এটাই স্বাভাবিক। তবে এটার সঙ্গে আমাদের দেয়া ডিগ্রির মানের সম্পর্ক নেই।’
তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে আসা ভারতীয়দের অধিকাংশও এফএমজিই পরীক্ষায় ফেল করছে বলে প্রতিবেদনে দেখা গেছে।
এনইবি প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮—এই চার বছরে মরিশাস থেকে পড়ে আসাদের ৫২ শতাংশ, চীনের মেডিকেল কলেজ থেকে পড়ে আসাদের ১১ শতাংশ, রাশিয়ার ডিগ্রিধারীদের ১২ দশমিক ৬৯, নেপালি প্রতিষ্ঠানের সনদধারীদের ১৭ শতাংশ এবং ইউক্রেন থেকে পড়ে আসাদের মাত্র ১৫ শতাংশ এফএমজিই পরীক্ষায় পাস করেছে।
Leave a reply