স্বপ্রতিভায় ভাস্বর এক শিল্পস্রষ্টা ঋত্বিক ঘটক। ‘খ্যাপাটে চলচ্চিত্রকার’ বললে মোটেও অত্যুক্তি করা হবে না। ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকার জিন্দাবাজারের ঋষিকেশ দাশ লেনের ঐতিহ্যময় ঘটক বংশে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবের একটা বড় সময় তার কেটেছে রাজশাহী শহরে। রাজশাহীর কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন এবং ১৯৪৬ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে আই.এ পাশ করেন। কিন্তু ৪৭’এর দেশভাগের ফলে কলকাতায় চলে যেতে বাধ্য হন ঘটক পরিবার। জন্মভূমি ত্যাগ করে শরণার্থী হবার সেই মর্মবেদনা ঋত্বিক কোনোদিন ভুলতে পারেননি, যা তার সৃষ্টির মধ্যে ফুটে উঠেছে বারবার।
ঘটক পরিবারের সবাই ছিলেন বেশ শিল্পমনা। তাই শিল্পসাহিত্যের সাথে ঋত্বিকের পরিচয়টা ঘটে পরিবার থেকেই। আর কলকাতায় গিয়ে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন থিয়েটারের সাথে। পরবর্তিতে ১৯৫১ সালে নিমাই ঘোষের ‘ছিন্নমূল’ এর মধ্য দিয়ে সেলুলয়েড দুনিয়াতে প্রবেশ ঘটে ঋত্বিক ঘটকের। সিনেমাটিতে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি কাজ করেন ছিলেন সহকারী পরিচালক হিসেবে।
সাল ১৯৫৩। তার প্রথম সৃষ্টি ‘নাগরিক’। এরপর ১৯৫৭ সালে নির্মাণ করেন ‘অযান্ত্রিক’। সিনেমাটি মুক্তির সাথে সাথেই সফল চলচ্চিত্রকার রূপে খ্যাতিলাভ করেন ঋত্বিক ঘটক ।
শরণার্থীদের নিয়ে ঋত্বিক নির্মাণ করেন ট্রিলজি- ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমল গান্ধার’ ও ‘সুবর্ণরেখা’। এরপর আট বছরের বিরতি নেন ঋত্বিক। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে এসে নির্মাণ করেন তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। তার শেষ সিনেমা ‘যুক্তি তক্কো গপ্পো’। আর তার প্রত্যেকটা সিনেমা একএকটা ইতিহাস হয়ে আছে সিনেমা প্রেমীদের কাছে।
চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৬৯ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৭৫ সালে ‘যুক্তি তক্কো গপ্পো’ চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ কাহিনীর জন্য ভারতের জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। ঋত্বিক যে মানের নির্মাতা ছিলেন তার যোগ্য সম্মান সে সময় তিনি পাননি। বাংলা চলচ্চিত্রের আকাশ যে কয়েকজন নক্ষত্রের আলোতে আলোকিত, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। একই সাথে ছিলেন যুগ সচেতন চলচ্চিত্রকার, গল্পকার, নাট্যকার, অভিনেতা এবং মনে-প্রাণে একজন বাঙালি। ঋত্বিক ঘটক ছিলেন আছেন, থাকবেন সব সময়, তার কাজের মধ্য দিয়ে।
Leave a reply