মাহফুজুর রহমান নিপু, সাভার
সদ্য লেখা পড়া শেষ করা ছেলে ব্যবসা শুরু করতে চাইছিলেন। তাই নিজের সঞ্চয় থেকে ছেলেকে তিন লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন মা। সেই ছেলেটি এখন কি না ঢাকা জেলার সেরা করদাতা। শুধু তাই নয়, গত চার বছর ধরে সর্বোচ্চ কর পরিশোধের এই খেতাবটি ধারাবাহিকভাবেই জমা হয়েছে তার ঝুলিতেই!
সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের তরুণ ব্যবসায়ী হিসেবে এবারও সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন তানভীর আহমেদ রোমান ভূইয়া। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার রেডিসন হোটেলে তাকে এই সম্মাননা স্মারক তুলে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামাল।
রোমান ভূইয়া ২০০৭ সালে একটি টেলিকম কোম্পানির এক্সক্লুসিভ আউটলেট দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন ব্যবসায় । অনিশ্চিত ছিল ব্যবসার ভবিষ্যৎ। নিজেই সেবা দিতেন গ্রাহকদের। দিন- রাত একাকার ছিল লালিত স্বপ্নের কাছে । তখন কে জানতো তিনিই হবে এখনকার সেরা করদাতা ব্যবসায়ী?
শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় মুঠোফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের প্রথম আউটলেট চালু করেন রোমান ভূইয়া। ব্যবসা চালু করতে মাত্র তিন লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন মা তমিছুন নেছা। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে তার ব্যবসা। ছেলের কঠোর পরিশ্রম আর ব্যবসার সফলতা দেখে এক বছর পর আরও ১০ লক্ষ পুজি দেন বাবা আলহাজ্ব ছফিল উদ্দিন ভূইয়া। এই পুজি দিয়ে ২০০৮ সালে জামগড়া এলাকাতেই গ্রামীন ফোনের আর একটি নতুন আউটলেট চালু করেন রোমান ভূইয়া। এরপর দিন যতই গড়িয়েছে, ব্যবসা বেড়েছে ততই। প্রথম বছরেই গ্রামীন ফোনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেবা প্রদানকারী আউটলেট হয়ে ওয়ে ওঠে রোমানের আউলেট। এরপর এই অঞ্চলের গ্রামীন ফোনের ডিস্ট্রিবিউটরশিপ পেয়ে যান রোমান ভূইয়া।
ব্যবসায় মুনাফা বাড়তে থাকলে অন্যন্য খাতেও বিনিয়োগ বাড়ান রোমান ভূইয়া। বর্তমানে তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান-বন্ধন ডিস্ট্রিবিউশন এন্ড সাপ্লাইয়ার্স (ডিস্ট্রিবিউটর অব গ্রামীনফোন), প্রোভাত হাউসিং লিমিটেড, গ্লোরী ডিস্ট্রিবিউশন কর্পোরেশন(ডিস্ট্রিবিউটর অব বিকাশ), নায়ফা ট্রেড বিডি, শার্প স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক এবং নান ব্রিকসে কাজ করছে প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মী।
ব্যবসাকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসার পথে নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে রোমান ভূইয়া বলেন, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বাপ-দাদার অনেক সম্পদ ছিল। তবুও এতটা সহজ ছিল না আমার নিজের পথ। হাল ছাড়িনি। প্রথম দিকে বেতন ভুক্ত কর্মী ছাড়াই ব্যবসা সামাল দিয়েছি। সকাল ৮ থেকে রাত ১২ টা অবধি কাজ করেছি। দুপুরের দিকে আউটলেট বন্ধ করে কখনও ঘুমাইনি। এই সময়ের মধ্যে গ্রামীন ফোনের কিংবা বাংলালিংয়ের প্রধান কার্যালয়ে ছুটে গেছি।
রোমান ভূইয়া বলেন, “ব্যবসা বড় হতে থাকলে নিজেকে সামাজিক বিভিন্ন কাজ কর্মে নিয়োজিত করি। নিজের এলাকাতে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছি। কখনই কর ফাঁকি দেয়ার চিন্তা মাথায় ঢোকাই নি। ব্যবসা শুরুর পরের বছর থেকে আমি আয়কর দাতা হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করি। ব্যবসা যত এগিয়েছে, কর দেয়া ততই বাড়িয়েছি। ২০১৬ সালে ঢাকা জেলায় প্রথম সেরা করদাতা হিসেবে সম্মাননা পাই। এরপর ২০১৭, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালেও সেরা করদাতা নির্বাচিত হলাম। আমি মনে করি রাষ্ট্রের সঙ্গে কখনই বেঈমানী করা উচিত নয়। কখনই সম্পদের হিসেব গোপন রাখা উচিত নয়।
Leave a reply