আয়করের নাম শুনলেই অনেকের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করে। টাকা দেয়া ছাড়াও পুরো প্রক্রিয়াকে জটিল মনে হয়। ফলে সামর্থ্য থাকার পরও অনেকে কর দেন না। আবার করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকলেও অনেকে রিটার্র্ন জমা দেন না। তবে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে কর দেয়ার প্রক্রিয়াও সহজ করা হয়েছে। সহজে কর দেয়ার জন্য সরকার করমেলার আয়োজন করেছে। এক্ষেত্রে একটু সচেতন হলেই কারও সহায়তা ছাড়াই খুব সহজেই ফরম পূরণ করা যায়। একটি বিষয় উল্লেখ করা জরুরি, রিটার্র্ন জমা দিলে কর দিতে হয় না। আয়করযোগ্য হলে শুধু কর দিতে হবে। তবে ই-টিন নম্বর থাকলে অবশ্যই রিটার্ন দাখিল করতে হবে। তবে আয়কর মেলায় ফরম পূরণের জন্য সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বাংলা ও ইংরেজি দু’ধরনের ফরম আছে। ফরমে ৮টি পাতা। প্রথম পাতায় করদাতাকে ১৬টি বিষয় উল্লেখ করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে- করদাতার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, টিআইএন নম্বর, কর সার্কেল, কর অঞ্চল ও করবর্ষ। এছাড়াও করদাতার ধরন, বাবা-মায়ের নাম, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, জন্মতারিখ ও টেলিফোন নম্বর। দ্বিতীয় পাতায় বেতন, আয়, সম্পদ, আগের বছর কর, নিরাপত্তা জামানতের ওপর সুদ এবং কর অব্যাহতি থাকলে তার পরিমাণ উল্লেখ করতে হয়। তৃতীয় পাতায় আয়ের বিষয়টি বিস্তারিত উল্লেখ করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে- মূল বেতন, বিশেষ বেতন, মহার্ঘভাতা, বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসাভাতা, ওভারটাইম, ছুটি ও সম্মানী বা পুরস্কারের টাকা এবং বোনাস। এসব আয় থেকে মোট করযোগ্য আয়ের বিষয়টি উল্লেখ করতে হয়।
এছাড়াও গৃহ সম্পত্তি থেকে আয় উল্লেখ করতে হয়। বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের বিষয়টি উল্লেখ করতে হয়। পঞ্চম পাতায় মোট সম্পদ, দায় ও ব্যয়ের বিষয়টি উল্লেখ করা জরুরি। ষষ্ঠ পাতায় করদাতার স্থাবর সম্পদের বর্ণনা দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ থাকে। সপ্তম পাতায় গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, টেলিফোন বিল এবং সন্তানদের লেখাপড়া খরচসহ সংসারের বিলের বিষয়টি উল্লেখ জরুরি। সর্বশেষ পাতায় মোট আয়, করযোগ্য নিট সম্পদ এবং পরিশোধিত করের বিষয়টি উল্লেখ করে করদাতার স্বাক্ষর জরুরি। ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয় সীমা গত ৪ বছর পর্যন্ত অপরিবর্তিত রয়েছে।
এবারের বাজেটেও কেউ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করলে তাকে কোনো কর দিতে হবে না। এছাড়া মহিলা ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে করদাতাদের করমুক্ত আয় সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ৩ লাখ ৫০ হাজার অপরিবর্তিত রয়েছে। একইভাবে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সীমা ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকায় স্থির। ৪ হাজার অপরিবর্তিত রয়েছে ন্যূনতম কর। একজন চাকরিজীবীর মোট বেতনের বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত ভাতা ও চিকিৎসা ভাতার করযোগ্য অংশ যোগ করে (এ তিন ক্ষেত্রের একটি বড় অংশে কর রেয়াত মেলে) বছরে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হলে কোনো কর দিতে হয় না। এর বেশি আয় হলে প্রযোজ্য হারে কর দিতে হয়।
ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমার হিসাব করে দেখা যায়, একজনের সবমিলে মাসিক আয় ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকা হলে তিনি করের আওতায় চলে আসেন। এর বাইরে অন্য কোনো আয় নেই তার। বিদ্যমান নিয়মে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত করহার ‘শূন্য’। ফলে তার অবশিষ্ট আয় আড়াই লাখ টাকার জন্য কর দিতে হবে।
Leave a reply