বিদ্যালয়ে সময়মতো উপস্থিত না হলে শাস্তি দেয়া হয় শিক্ষার্থীকে। যা চিরচরিত নিয়ম। তবে সে নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি বিদ্যালয়ে।
সময়মতো বিদ্যালয়ে না আসায় কোনো শিক্ষার্থীকে নয়; খোদ প্রধান শিক্ষককে শাস্তি হিসেবে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হলো। আর সেই শাস্তি অবশ্যই দিল অভিভাবকরা।
সম্প্রতি এ ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায় ঝালদার পুস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর শাস্তিপ্রাপ্ত সেই প্রধান শিক্ষকের নাম বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়।
এক সর্ব ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় পুঞ্চা থানার বদঙা গ্রামের বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যোগদানের পর চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে স্কুলে সময়মতো আসেন না বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়। এছাড়াও মিড-ডে মিলে মান সম্পন্ন খাবার দেয়া হতো না। বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে তার কাছে গেলে কক্ষে তাকে পাওয়া যেতো না।
এ নিয়ে অভিভাবকরা অনেক চেষ্টা করেও ওই শিক্ষকের স্বভাব বদলাতে পারেননি। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ করেও ফল মেলেনি। প্রশাসন অভিভাবক, এলাকাবাসী আর শিক্ষার্থীদের কোনো কথাই কানে তোলেনি।
একদিন গ্রামবাসীরা ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তালাবন্দি করেন। পরে শিক্ষকদের উদ্ধার করা হলেও বিদ্যালয়ে প্রায় সপ্তাহখানেক ক্লাস বন্ধ রাখা হয়। বিকল্প হিসেবে পার্শ্ববর্তী দুর্গামন্দিরে ক্লাস নিতেন শিক্ষকরা। প্রধান শিক্ষক নিজের আচরণ না বদলালে এ বিদ্যালয় খোলা হবে না বলে জানান এলাকাবাসী। বিষয়টি মেটাতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এলাকায় গেলে প্রধান শিক্ষক মুচলেকা দিয়ে বিদ্যালয়টি ফের চালু করেন।
কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই ফের আগের আচরণে ফিরে যান প্রধান শিক্ষক বিপ্লব। গত আগস্ট মাসে মিড-ডে মিলে মুড়ি ও চানাচুর দিলে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
এছাড়াও প্রধান শিক্ষক আগের মতোই দেরি করে আর অনিয়মিতভাবে বিদ্যালয়ে আসতে থাকেন। এভাবে টানা প্রায় তিন মাস চলার পর বেশ ক্ষুব্ধ হন অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।
সেই রেশ ধরে সোমবার (১৮ নভেম্বর) বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে প্রধান শিক্ষক বিপ্লব বিদ্যালয়ে এলে তাকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে ফেলেন এলাকাবাসী।
তবে খবর শোনার কয়েক ঘণ্টা পর কর্তৃপক্ষ প্রধান শিক্ষককে মুক্ত করেন। মুক্ত হয়েই স্থানীয় থানায় এ নিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন বিপ্লব গঙ্গোপধ্যায়।
মামলায় পুস্তি গ্রামের চন্দ্র কুমার ও গুরুদাস প্রামাণিক নামের দুই ব্যক্তিকে প্রধান আসামি করেন তিনি।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে ওই দুই অভিযুক্তকে সোমবার রাতেই গ্রেফতার করে তাদের আদালতেও চালান করেছে পুলিশ। বিচারে জেলা মুখ্য বিচারক রিম্পা রায় প্রধান শিক্ষককে আটকে রাখার জন্য প্রধান দুই আসামিকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শুধু এই বিদ্যালয়েই নয় আগের দুই প্রতিষ্ঠানেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সেই কারণে তিনবার শাস্তিস্বরূপ বদলিও হয়েছেন তিনি। কিন্তু তবুও তার আচরণে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
আদালত বিপ্লব গঙ্গোপধ্যায়ের পক্ষে রায় দিলেও পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এই ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করেছে। সেই তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই প্রধান শিক্ষককে তলব করা হবে বলে জানা গেছে।
Leave a reply