সবকিছু পরিকল্পনা মতোই হচ্ছে। জাতিগত উত্তেজনার ভেলায় চড়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভূমিধস জয়। ছোট ভাই গোতাবায়া রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট।
ছোট ভাইয়ের হাত ধরে এবার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। ফলে শ্রীলংকা ফের রাজাপাকসে পরিবারের হাতের মুঠোয়। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হতো মাহিন্দাকে।
কিন্তু সেই রাস্তা পরিষ্কার করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। নির্বাচনে বিপর্যয়কর পরাজয়ের চারদিনের মাথায় সরকার ভেঙে দিয়ে পদত্যাগ করেছেন তিনি।
বুধবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে বিক্রমাসিংহে বলেন, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
এর কয়েক ঘণ্টা পরই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বড় ভাই মাহিন্দার নাম ঘোষণা করেন গোতাবায়া। খবর রয়টার্স ও এএফপির।
২০০৫ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত একটানা ১০ বছর দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাহিন্দা। সেসময় পুরো পরিবার মিলে শাসন করেছেন দেশ।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন গোতাবায়া। অন্য দুই ভাইয়ের একজন অর্থমন্ত্রী, আরেকজন পার্লামেন্টের স্পিকার।
২০০৯ সালে কয়েক দশকব্যাপী চলা তামিল টাইগার বিদ্রোহ কঠোর ও নির্মমভাবে দমন করে রাজাপাকসে ভাইয়েরা। ৪০ হাজার তামিলকে হত্যা করা হয়। সব মিলিয়ে নিহত হয় এক লাখ মানুষ।
এছাড়া ২০১৫ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের আগ পর্যন্ত সরকার-সমালোচক সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন, তামিলসহ হাজার হাজার মানুষের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে।
দু’বারের বেশি প্রেসিডেন্ট হওয়া সংবিধান পরিপন্থী। তাই এবার কৌশল বদল। ছোট ভাইয়ের পেছনে বসেই দেশ চালাবেন তিনি। স্বপ্ন শতভাগ সফল। শনিবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শ্রীলংকা পোদাজানা পার্টির প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছেন গোতাবায়া।
ধরাশায়ী করেছেন বিক্রমাসিংহে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী সাজিথ প্রেমাদাসাকে। এ নির্বাচন বিক্রমাসিংহের ইউএনপি সরকারের জন্য জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের প্রথম পরীক্ষা ছিল।
বিক্রমাসিংহে দলপ্রধান হলেও নিজে প্রার্থী না হয়ে দলের উপপ্রধান সাজিথের জন্য প্রার্থিতা ছেড়ে দেন। দলের ভরাডুবির পরপরই বিক্রমাসিংহের মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী মঙ্গলা সামারাবীরাসহ প্রায় ১০ মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।
লাগামহীন দুর্নীতি ও সংখ্যালঘু নির্যাতন-নিপীড়নে অভিযুক্ত রাজাপাকসে সরকারের সদস্যদেরকে বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসেন বিক্রমাসিংহে। কিন্তু গত প্রায় পাঁচ বছরেও অপরাধীদের একজনকেও বিচারের আওতায় আনতে পারেননি।
বরং নিজেই স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগের মুখে পড়েছেন। নানা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে তার সরকারের বিরুদ্ধে অযোগ্যতার অভিযোগও উঠেছে। জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বড় ব্যর্থতা দেখিয়েছে তার সরকার।
চলতি বছরের এপ্রিলে শ্রীলংকায় বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। রাজধানী কলম্বোয় সিরিজ বোমা হামলায় বিদেশিসহ নিহত হয় ২৬৯ জন। ২০১৫ সালের আগস্টে পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব নেয় বিক্রমাসিংহের সরকার।
সেই হিসেবে আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত সরকারের মেয়াদ ছিল। প্রায় চার মাস আগেই সরকার ভেঙে গেল। চলতি সপ্তাহেই নতুন মন্ত্রিসভা দায়িত্ব নিতে পারে। ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে রাজাপাকসের দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।
ফলে সরকার গড়তে বিক্রমাসিংহের ইউএনপির সহায়তা প্রয়োজন হবে। আগামী বছরের এপ্রিলে সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে সরকার।
Leave a reply