রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার সড়ক থেকে বুধবার মধ্যরাতে উদ্ধার হওয়া লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। ওই তরুণীর নাম রুবাইয়াত শারমিন ওরফে রুম্পা (২০)। তার বাবা রোকনউদ্দিন হবিগঞ্জ জেলার একটি ফাঁড়িতে পুলিশ পরিদর্শক পদে কর্মরত। রুম্পা রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের (স্নাতক) ছাত্রী ছিলেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম।
বুধবার রাতে সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডে লাশটি পাওয়ার পর ধারণা করা হচ্ছিল আশপাশের কোনো ভবন থেকে পড়ে যাওয়াই তার মৃত্যুর কারণ। কিন্তু আশাপাশের ভবনে খোঁজ নিয়েও ওই তরুণীকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
মনিরুল ইসলাম জানান, রুম্পা ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষে পড়তেন। মালিবাগের শান্তিবাগে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন ভাড়া বাসায়। চাকরির কারণে তার বাবা রোকনউদ্দিন হবিগঞ্জে থাকেন।
রুম্পার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন ওই থানার এসআই আবুল খায়ের।
প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানে তিনি জানান, বুধবার সন্ধ্যার পর রুম্পা বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন। সঙ্গে নিজের নিজের মোবাইল ফোনটিও নেননি তিনি। উঁচু থেকে পড়ে শরীরের যে ধরনের জখম হয়, রুম্পার শরীরে সে ধরনের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে।
পুলিশ বলছে, রুম্পাকে সিদ্ধেশ্বরীর কোনো একটি ভবন থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ধারণা করা হচ্ছে, রুম্পা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
রুম্পার মৃত্যুর বিষয়টি এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার নয় পুলিশের কাছে। এজন্য ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে তারা। এমনটি জানিয়েছেন রমনার ওসি মনিরুল। তিনি বলেন, এটি হত্যাকাণ্ড নাকি আত্মহত্যা সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। তবে হত্যা মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে বিষয়টি।
ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার রাতে রুম্পার লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছেন ময়মনসিংহের গ্রামের বাড়িতে।
উল্লেখ্য, বুধবার মধ্যরাতে পুলিশ ৬৮ সিদ্ধেশ্বরীর সামনের রাস্তা থেকে রুম্পার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। এর আগে পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে।
সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, তরুণীর মেরুদণ্ড, বাঁ হাতের কনুই ও ডান পায়ের গোড়ালি ভাঙা। মাথা, নাক, মুখে জখম এবং রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল। বুকের ডান দিকে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে বৃহস্পতিবার রুম্পার লাশের ময়নাতদন্ত হয়। মেডিকেলের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, তরুণীর শরীরের আঘাত দেখে মনে হয়েছে ওপর থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেলে তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করে বলা যাবে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, রুম্পা দুটি টিউশনি করে বুধবার সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন। পরে তিনি কাজ আছে বলে বাসা থেকে বের হন। বাসা থেকে নিচে নেমে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন ও পরা স্যান্ডেল বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে এক জোড়া পুরোনো স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে তিনি বেরিয়ে যান। কিন্তু রাতে আর বাসায় ফিরেননি। স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাননি। বৃহস্পতিবার রুম্পার মাসহ স্বজনেরা রমনা থানায় গিয়ে লাশের ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেন।
এই মামলার তদন্ত করছেন রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহিরুল ইসলাম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। পরিচয় যখন পাওয়া গেছে, শিগগিরই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হবে।
Leave a reply