দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানি চলছে। গণহত্যার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়ে মিয়ানমারের পক্ষে সাফাই গেয়ে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি রাখাইনে সহিংসতার কথা স্বীকার করলেও একে কোনোভাবেই ‘গণহত্যা’ বলা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গণহত্যা কী এবং রোহিঙ্গা গণহত্যা আসলে প্রমাণ সম্ভব কি না। বিশ্লেষকরা বলছেন, গণহত্যার ঘটনা প্রমাণ করা কঠিন; কিন্তু অসম্ভব নয়। লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সেসিলি রোস বলেন, গণহত্যা একটি উচ্চ স্তরের আন্তর্জাতিক অপরাধ, যেটা সচরাচর ঘটে না। তিনি বলেন, গণহত্যা প্রমাণের সবচেয়ে কঠিন দিক হচ্ছে, অপরাধের মনস্তাত্ত্বিক উপাদান বা উদ্দেশ্য প্রমাণ করা অর্থাৎ গণহত্যা সংঘটনে কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের অভিপ্রায় প্রমাণ করা। তার মতে, ‘গণহত্যার মাপকাঠি খুবই উঁচু।’
১৯৪৪ সালে প্রথম ‘জেনোসাইড’ শব্দটি ব্যবহার করেন পোল্যান্ডের ইহুদি আইনজীবী রাফায়েল লেমকিন। জার্মানি ও আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, যদি ইচ্ছে করে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মানুষকে হত্যা করা হয়, তাহলে সেটি ‘জেনোসাইড’ বলে বিবেচিত হতে পারে। কী ধরনের ঘটনাকে জেনোসাইড বলা যায়- যখন জাতিগত ও ধর্মের কারণে অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়, একটি দেশ যখন ঘোষণা দিয়ে কোনো নির্দিষ্ট জাতিগত ও ধর্মীয় গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়, তখন সেটি জেনোসাইড বলে বিবেচিত হতে পারে।
রোহিঙ্গা গণহত্যার ব্যাপারে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের রিপোর্টে ইতিমধ্যে বলা হয়েছে, ‘রোহিঙ্গাদের গণহত্যার মাধ্যমে তারা ধ্বংস করতে চেয়েছিল এবং তাদের পালাতে বাধ্য করেছে।’ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে মঙ্গলবার আদালতে বাদীপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, রোহিঙ্গা শিশু ও নারীরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর লক্ষ্য ছিল। এ কারণে দেশটির সেনাবাহিনীকে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।
দলের অন্য এক সদস্য এন্ড্র লয়েনস্টেইন বলেন, মিয়ানমার বর্ণবৈষম্যে বিশ্বাস করে এবং তাদের এ ধরনের কাজের হাজার হাজার প্রমাণ আছে। তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ৩৯২টি গ্রাম সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে পুড়িয়ে দিয়েছে। এখনও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকারের হাত থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করা সম্ভব। ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক মাইক বেকার বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার দাবি এই মামলার প্রথম ধাপ।’
Leave a reply