কামাল হোসাইন,নেত্রকোনা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি পোস্টের কারণে অবশেষে ভাঙ্গা পায়ে বয়ে বেড়ানো রড খোলা হলো সেই অসহায় বৃদ্ধ কুদ্দুস আলীর (৮২)। চিকিৎসার টাকার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি পায়ে রড রয়ে বেড়াচ্ছিলেন। রোববার বিকেলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচার করে রডগুলো খোলা হলো।
কুদ্দুস আলী নেত্রকোনার শহরের ছোটগাড়া এলাকার বাসিন্দা। গত সাত মাস আগে একটি দুর্ঘটনায় তাঁর পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায়। পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই স্থানে রড লাগানো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কুদ্দুস আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মে মাসের শেষ দিকে কুদ্দুস আলী নিজ বাড়ির পাশের সড়ক দিয়ে হাঁটছিলেন। এসময় একটি মোটরসাইকেল তাঁকে চাপা দেয়। এতে তাঁর বাম পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায়। ঘটনার পর প্রথমে নেত্রকোনা ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন দরিদ্র এই বৃদ্ধ। ওই সময় ময়ময়নসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা ভাঙ্গা পায়ের ভেতরে ও বাইরে রড ঢুকিয়ে দেন। দুই মাস পর রডগুলো খোলার কথা ছিল। কিন্তু টাকার অভাবে তিনি তা খোলতে না পেরে রডগুলো বয়ে বেড়াচ্ছিলেন। সপ্তাহখানেক আগে এ নিয়ে একই উপজেলার দক্ষিণ বিশিউরা গ্রামের মাসুদুল করিম ও জেডএইচ বাবু ভূঁইয়া নামের দুই যুবক তাঁদের নিজস্ব ফেইসবুক আইডি থেকে পোস্ট দেন। পোস্টটিতে সাড়া দিয়ে কয়েকজন লোক কুদ্দুস আলীকে সামান্য আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়ান। এ ছাড়া ওই পোস্টটি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার নাসির উদ্দিন আহমেদের নজরে পড়লে তিনি কুদ্দুস আলীর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। রোববার সকালে কুদ্দুস আলীকে বাড়ি থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। পরে ওই দিন বিকেলে হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মতিউর রহমানের তত্ত্বাবধানে কুদ্দুস আলীর পায়ের রডগুলো খোলা হয়েছে।
মাসুদুল করিম রোববার সন্ধ্যার দিকে জানান, ‘কুদ্দুস আলী একবারে হতদরিদ্র। তাঁর একটি প্রতিবন্ধী ছেলে রয়েছে। চিকিৎসা করানোর মতো টাকা নেই। বিষয়টি দেখে আমি ও আমার বন্ধু জেডএইচ বাবু ভূঁইয়া ফেইসবুকে পোস্ট দিলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার নাসির উদ্দিন আহমেদের নজরে পড়ে। এরপর তিনি যোগাযোগ করে রোববার সকালে তাঁকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে নিয়ে পায়ের রডগুলো খোলার ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া ওই পোস্টটি দেখে বেশ কয়েকজন তাঁকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মতিউর রহমান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তিনি এখন সুস্থ আছেন। দীর্ঘদিন পায়ে রড থাকার কারণে পা সামান্য বেঁকে গেছে। চিকিৎসা করানো হলে তিনি সুস্থ হবেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, তিনি এখন সুস্থ আছেন। দীর্ঘদিন পায়ে রডগুলো থাকায় একটু সমস্যা হয়েছে। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।
Leave a reply