মানুষ সব সময়ই চেষ্টা করেছে সুন্দর আর মনোরম স্থাপনা তৈরি করতে। কিন্তু প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ মাঝে মাঝে মাটির ওপরের এ স্থাপনাগুলো টেনে নিয়ে গেছে নিচে। এগুলোর কোনোটা গেছে হারিয়ে। আবার কোনোটা রয়ে গেছে পানির তলাতেই। জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের। এমনই প্রশ্নে ভরা রহস্যময় ডুবন্ত স্থাপনা পাভলোপেত্রি। এটি ৫ হাজার বছরের পুরনো আর পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ডুবন্ত শহর হিসেবেও পরিচিত।
গ্রিসের পেলোপনেশিয়ার দক্ষিণ ল্যাকোনিয়ায় পানির নিচে অবস্থিত পাভলোপেত্রির সত্যিকারের নামটা কখনও জানা হয়ে ওঠেনি কারও। মানুষ নতুন করে নাম দিয়েছে শহরটির। ১৯০৪ সালে ফোকিয়োনোস নেগ্রিস প্রথম আবিষ্কার করেন এই পানির নিচের শহরটিকে। এরপর তার আবিষ্কারকে ১৯৬৭ সালে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন নিকোলাস ফ্লেমিং। ৫ হাজার বছরের পুরনো হলে কী হবে, বর্তমান শহরগুলোর চেয়ে কোনো দিক দিয়েই কম নয় পাভলোপেত্রি। কী নেই এখানে? ৩ লাখ ২২ হাজার ৯১৭ বর্গমাইলের এই শহরে রাস্তা, দালান, মন্দির-মোটকথা, পুরো শহরের নকশাই সাজানো আছে এতে। যা দেখলে চোখ কপালে উঠবে অনেকেরই। ব্রোঞ্জ যুগের এ শহরটি ১ হাজার খ্রিস্টপূর্বে পরপর ঘটে যাওয়া তিনটি ভূমিকম্পের কবলে পড়ে একেবারে ডুবে যায়। যেটা এরপর আর জেগে ওঠেনি কখনই। তবে ডুবে যাওয়ার আগেই কৃষি, কাপড় বোনাসহ আরও অনেক দক্ষতা দেখিয়ে গেছেন এখানকার মানুষ তাদের কাজে। শুধু তাই নয়, পাভলোপেত্রির মানুষ ব্যবসা নিয়েও বেশ এগিয়ে ছিলেন বলে জানা যায়। বর্তমানে নৌকা করে চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন পর্যটকরা এ অসম্ভব সুন্দর স্থাপনাটি থেকে। তবে কেবল পর্যটকদেরই নয়, ইউনেস্কোর কাছ থেকেও বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হওয়ার সম্মান মিলেছে পাভলোপেত্রি শহরের ভাগ্যে।
আটলান্টিস বলে প্রাচীন এক সভ্যতার কথা জানতে পারা যায় গ্রিকদের পৌরাণিক কাহিনী থেকে। যার সত্যতা নিয়ে লিখেছেন প্লেটোও। যখনই ডুবন্ত কোনো শহর পাওয়া যায় সেটার সঙ্গে আটলান্টিসের যোগসূত্র বের করার চেষ্টা করে মানুষ। যতটা পারা যায় চেষ্টা করেছেন বিশেষজ্ঞরা পাভলোপেত্রি আগে কেমন ছিল সেটা দোখানোর। চেষ্টা মোটামুটি সফলও হয়েছে। তবে পাভলোপেত্রি শহরটি আটলান্টিসের কোনো অংশ ছিল কিনা সেটা আজ পর্যন্ত বের করতে পারেননি তারা।
Leave a reply