দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরমাণু বোমার আঘাত সহ্য করে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি ভবন ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা করছে জাপানের হিরোশিমা শহর কর্তৃপক্ষ।
তবে স্থানীয় বাসিন্দারা এর বিরোধিতা করে ভবন দুটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।
১৯১৩ সালে নির্মিত এ ভবনগুলো প্রথমে সামরিক বাহিনীর কাপড়ের কারখানা এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের আবাসিক হল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বোমা হামলার পরপরই ভবন দুটিকে কিছু সময়ের জন্য অস্থায়ী হাসপাতাল হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট মার্কিন বোমারু বিমান বি-২৯ থেকে হিরোশিমায় ফেলা হয় ‘লিটল বয়’। এটি তাৎক্ষণিকভাবেই ৮০ হাজার লোকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল, গুরুতর আহত করেছিল আরও ৩৫ হাজার বাসিন্দাকে। আণবিক বোমাটি অধিকাংশ শহরকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলেও কিছু ভবনকে টলাতে পারেনি।
বোমা পড়ার স্থান ‘গ্রাউন্ড জিরো’ থেকে আশপাশের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে এ ধরনের বেশকিছু ভবনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। গত বছর পর্যন্ত এ রকম ৮৫টি ভবনের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলো নির্মিত হয়েছিল ১৯৪৫ সালের আগস্টের আগে।
হিরোশিমা কর্তৃপক্ষ এখন যে দুটি ভবন ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা করছে সেগুলো নির্মিত হয়েছিল শক্তিশালী কংক্রিটে। আণবিক বোমা ভবনটির ধাতব জানালা এবং দরজার সামান্য ক্ষতি করেছে, যা এখনও দৃশ্যমান।
শক্তিশালী যে কোনো ভূমিকম্পে স্থাপনা দুটি ধসে পড়তে পারে- ২০১৭ সালের এক পরীক্ষায় এমনটি ধরা পড়ে। এরপর হিরোশিমা শহর কর্তৃপক্ষ ভবন দুটি ২০২২ সালের মধ্যে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।
ভবন দুটি ভাঙা হলেও একই স্থানে অবস্থিত অপর একটি ভবন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়। দেয়াল ও ছাদ সংস্কার করে ওই ভবনটিকে ভূমিকম্প প্রতিরোধের উপযোগী করে বানানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। ভেঙে ফেলার অপেক্ষায় থাকা দুই ভবনের একটিতে ১৯৪৫ সালের বোমা হামলার সময়ই ছিলেন ইয়াও নাকানিশি।
৮৯ বছরের এই বৃদ্ধ এখন ভবন দুটি ভাঙার পরিকল্পনার বিরোধিতা করা স্থানীয়দের একটি সংগঠনের প্রধান। তিনি বলেন, ‘মর্মান্তিক ওই ঘটনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাতে ভবন দুটির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে আমরা কোনোভাবেই সেগুলো ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা মেনে নিতে পারি না। আমরা দৃঢ়ভাবে এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করছি।’
ভবন দুটি পরিদর্শনে যাওয়া ৬৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বলেন, ‘খুবই মূল্যবান ভবন। এগুলো আমাদের আণবিক বোমার ভয়াবহতার কথা বলছে।
সরাসরি দেখে আমার মধ্যে এমন অনুভূতি হয়েছে যে আমি চাই এ ধরনের ভবনগুলো সংরক্ষণ করা হোক।’
Leave a reply