প্রায় ৬ হাজার বছর আগের এক নারী। বলা চলে প্রস্তর যুগের। নাম তার লোলা। সেটি অবশ্য এ যুগে দেয়া নাম। জানা গেছে লোলা সম্পর্কে, আঁকা হয়েছে তার ছবি। ডেনমার্কে পাওয়া গিয়েছে তার খাওয়া ‘চুইং গাম’-এ লেগে থাকা মুখের লালা। তবে কী প্রস্তর যুগেও চুইংগাম চিবাতো মানুষ? প্রশ্নটি অবান্তর মনে হলেও সম্প্রতি মিলেছে এর উত্তর। ধারণা করা হচ্ছে কোনো গাছের আঠালো রস জাতীয় কিছু চিবাতো লোলা। তার লালার মধ্যে মিলেছে মানুষের পরিপূর্ণ জিনম। এর ভিত্তিতেই আঁকা হয়েছে লোলার এই ছবি। প্রত্নতত্ত্ববিদদের কাছেও বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এত পুরাতন কোনো মানুষের হাড় পাওয়া যায়। কিন্তু হাড় ব্যতীত মানুষের পরিপূর্ণ জিনম থেকে ডিএনএ পাওয়া এবারই প্রথম, যা থেকে দারুণ কার্যকরভাবে এই নারীর প্রতিচ্ছবি তৈরি করেছে গবেষকেরা।
বিবিসি জানিয়েছে, কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক দল প্রথম এই নারীর ডিএনএ খুঁজে পায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হেনা স্কুডার বলেন, আসলে চুইং গাম বলে আমরা যেটা বোঝাচ্ছি সেটা কোনো একটি গাছের কস ছিলো যা এই নারী চিবিয়েছিলো। সেখানে এই নারীর দাঁতের ছাপ পাওয়া যায়। আমরা সেই সময়কার কোনো মানুষের পরিপূর্ণ ডিএনএ এতদিন পাইনি।
তার জেনেটিক ডিকোডিং করে গবেষকরা জানান, এই নারীর গায়ের রং কিছুটা কালো ছিলো। আর চোখ ছিলো নীল। তার চুল ছিলো বাদামী বর্ণের। ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের শিকারি গোষ্ঠীদের একজন ছিলো সে। তবে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ানদের মত নয় সে। আর তার প্রমাণ বহন করছে বাদামী চুল ও নীল চোখ। বরফ যুগের সময় যখন হিমবাহের প্রকোপ কমে আসে তখন নিজ গোষ্ঠীর সঙ্গে সে উত্তর ভূখণ্ডের দিকে এসে বসবাস শুরু করে।
কিন্তু কেনো এই বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ? তার উত্তর দিলেন ড. হেনা। তিনি বলেন, এই ডিএনএ থেকে আমরা যেই তথ্য পেয়েছি, সেখান থেকে বোঝা যাচ্ছে আমাদের পূর্বসূরিরা কেমন ছিলো, তাদের খাদ্যাভ্যাস কী ছিলো, কিভাবে তার জীবন যাপন করত। আর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে তাদের থেকে ধীরে ধীরে আমরা বর্তমান মানুষে পরিণত হলাম? ফলে ‘লোলা’কে খুঁজে পাওয়া মানে আমাদের পূর্বসূরিদের ইতিহাস খুঁজে পাওয়াই বটে।
Leave a reply