ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারা পাচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের টিকিট- সেটি নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের গুরুত্ব বিবেচনায় আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের বাইরেও রাজনৈতিক সচেতনদের মাঝে প্রার্থীদের নিয়ে বাড়তি আগ্রহ কাজ করছে। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি নিয়ে। এখানে আওয়ামী লীগের একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন সেটি অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, সাবেক মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর তিনি এক বছরেরও কম সময় কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ছাড়া বড় ধরনের বিতর্কে পড়েননি তিনি।
আশাবাদী আতিকুল গণমাধ্যমে বলেছেন, মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রায় নয় মাস অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিদিন কাজ করেছি। এমন একটা দিন নেই যেদিন নগরের কাজে, নগরবাসীর প্রয়োজনে আমি ছিলাম না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী দল। আমি শতভাগ আশাবাদী এই দলের হয়ে মনোনয়ন পাব।
তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটির চিত্র এতটা সরল নয়। দক্ষিণে মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ চৌধুরী হিরু ও ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম। এখানে শেষ পর্যন্ত কে মনোনয়ন পাবেন সেটি নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যবচ্ছেদ।
রাজনৈতিক সচেতনদের ধারণা, দলের হাইকমান্ডের সংকেত না পেলে ব্যারিস্টার তাপস ফরম নিতেন না। মাত্রই কিছুদিন আগে তার বড় ভাই শেখ ফজলে শামস পরশকে অনেকটা ডেকে এনেই যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ মনির এই দুই পুত্র ‘ক্লিন ইমেজ’ ধরে রাখতে পেরেছেন। হুট করে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ব্যারিস্টার তাপস মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন না। ফলে, তাপসই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
শেখ তাপসের পরপরই দক্ষিণ সিটির জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তোলেন হাজী সেলিম। ঢাকা দক্ষিণে তার রাজনৈতিক প্রভাবের কথা সকলের জানা। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর সংবাদমাধ্যমের সামনে হাজী সেলিম ও ব্যারিস্টার তাপসের নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শ্লোগানের বিষয়টিও অনেকের মুখে আলোচিত হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনও দলীয় মনোনয়ন পেতে ফরম তুলেছেন। সেদিন তাকে বেশ বিপর্যস্ত দেখাচ্ছিল। সাবেক মেয়র হানিফের পুত্র খোকন গণমাধ্যমের সামনে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। সরাসরিই বলেন, কঠিন সময় পার করছি। সবাই দোয়া করবেন। সরকার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে তার ব্যাকফুটে থাকাটা স্পষ্ট।
আবেগাপ্লুত সাঈদ খোকনের কথা, আমার নেত্রী, আমার অভিভাবক শেখ হাসিনার প্রতি আমার আস্থা এবং বিশ্বাস আছে। আমার প্রিয় নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন। আমার বাবার অবর্তমানে আমার অভিভাবক প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। আমার পিতা বেঁচে নেই, পিতার হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছি। পিতার অবর্তমানে শেখ হাসিনাই আমার অভিভাবক। তিনি যেটা ভালো মনে করবেন তাই করবেন। তার সিদ্ধান্ত আমি মেনে নেব।
তিন হেভিওয়েট প্রার্থীকে নিয়ে চলা আলোচনা আরও জমিয়ে দিয়েছেন অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ চৌধুরী হিরু। সদ্যই আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদকের পদ পাওয়া নজিবুল্লাহ হিরুও ঢাকা দক্ষিণে নৌকার টিকিট নিয়ে নির্বাচনে আগ্রহী।
শনিবার রাতেই বসছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা। সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে কে পাচ্ছেন নৌকার টিকিট। তবে তার আগ চলবে পর্যন্ত রাজনৈতিক হিসেবনিকেশ।
Leave a reply